সহবাসের দোয়া ও নিয়ম

সহবাসের দোয়া

সহবাস” এর আরবি শব্দ হলো জিমা। এর বাংলা অর্থ একসাথে বসবাস করা, বা স্বামী স্ত্রীর যৌন সম্পর্ককে বোঝায়। সহবাস বলতে সাধারণত স্বামী-স্ত্রী সহবাসের দোয়া পড়ে শারীরিক মিলন বা দাম্পত্য সম্পর্কের অন্তরঙ্গতা বোঝানো হয়। এটি বৈবাহিক জীবনের একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সহবাসকে বৈধ ও পবিত্র একটি সম্পর্ক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এটি শুধু দাম্পত্য জীবনের একটি স্বাভাবিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমই নয়, বরং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা, শান্তি ও পারস্পরিক বোঝাপড়াকে মজবুত করার গুরুত্বপূর্ণ উপায়ও বটে।

Table of Contents

সহবাসের দোয়া বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ

ইসলামে স্ত্রী সহবাসের আগে দোয়া পড়া সুন্নত। এটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে বরকতময় করে এবং শয়তানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। সহবাসের আগে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা ভালো। সহবাসের জন্য উপযুক্ত সময় ও স্থান নির্বাচন করতে হবে। তার পর সহবাস শুরু করার আগে নিচের দোয়াটি পড়ে নিবে-

স্ত্রী সহবাসের দোয়া বাংলায়

সহবাসের আগে এই দোয়া মনে মনে বা উচ্চস্বরে পড়া যায়। এটি ইসলামের সুন্নত প্রথাগুলোর মধ্যে একটি। সহবাসের আগের দোয়া আরবি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ

بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা অজান্নিবিশ শায়ত্বনা মা রাযাকতানা।

অর্থঃ আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি। হে আল্লাহ! তুমি শয়তানকে আমাদের নিকট থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে (সন্তান) দান করবে তার থেকেও শয়তানকে দুরে রাখ।

স্ত্রী সহবাসের দোয়া বাংলা উচ্চারণ

সহবাসের দোয়াটি কেন পড়বেন: এ দোয়াটি পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে, নিচে কয়েকটি ফজিলত দেওয়া হলো-

  • শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া।
  • সন্তান শয়তানের প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকবে।
  • দাম্পত্য জীবন আরও বরকতময় হবে।
  • এটি পড়লে সহবাস থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান শয়তানের প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকবে।

ইসলামে সহবাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই এটি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা এবং নিয়ম মেনে চলা জরুরি। মনে রাখবেন সহবাসের মাধ্যেমে আপনার সন্তান জন্ম লাভ করে। তাই নেক সন্তান পাওয়ার জন্য সহবাসে ইসলামের নিয়ম মেনে সহবাস করা উচিত।

আরো পড়ুন: তাশাহুদ দুরুদ শরীফ দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ সহ

সহবাসের উত্তম দিন

ইসলামে সহবাসের নির্দিষ্ট কোনো  দিন নেই, তবে কিছু দিন ও সময় সম্পর্কে ইসলামীমে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জুমার রাত (বৃহস্পতিবার রাত) হাদিস অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে বা জুমার দিনে সহবাস করা বরকতময় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে সহবাসের সঠিক সময়

রাতের প্রথম ভাগে সহবাস করা উত্তম এতে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়েই মানসিক ও শারীরিকভাবে আরামদায়ক অনুভব করেন।

ইসলামে সহবাসের নিষিদ্ধ সময় কখন

সহবাসের সঠিক সময়

সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দুপুরের সময়: হাদিসে এসেছে, এ সময় শয়তানরা বেশি সক্রিয় থাকে, তাই এই সময় সহবাস করা অপছন্দনীয়।

চন্দ্র মাসের প্রথম, মধ্য ও শেষ রাত: কিছু হাদিসে বলা হয়েছে যে, চন্দ্র মাসের ১ম, ১৫তম ও শেষ রাতে শয়তানের প্রভাব বেশি থাকে, তাই এই সময় সহবাস পরিহার উত্তম।

ঈদের রাত ও দিন: ঈদের দিন ইবাদতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই সময় সহবাস করা মাকরূহ মনে করা হয়।

ইসলামে সহবাসের নিষিদ্ধ দিন

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস একটি হালাল ও পবিত্র কাজ, তবে কিছু নির্দিষ্ট দিন ও সময়ে এটি করা হারাম বলে গণ্য হয়েছে।

রমজান মাসে সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত: রোজা থাকা অবস্থায় সহবাস করা হারাম। তবে ইফতারের পর থেকে সেহরির আগে পর্যন্ত সহবাস করা জায়েজ।

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:
“তোমাদের জন্য রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস হালাল করা হয়েছে…”

হজ উমরার ইহরাম অবস্থায়: যখন কেউ হজ বা উমরার জন্য ইহরাম ধারণ করে, তখন সহবাস করা সম্পূর্ণ হারাম।

ঋতুস্রাব (মাসিক)চলাকালীন:  এই সময় স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করা হারাম।

কুরআনে বলা হয়েছে:
“আর তারা (স্ত্রীরা) মাসিক অবস্থায় থাকলে তাদের থেকে দূরে থাকো এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত সহবাসে গমন করো না…”

পবিত্র মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায়: রমজানের শেষ দশকে কেউ যদি ইতিকাফে থাকে, তাহলে সহবাস করা হারাম।

কুরআনে বলা হয়েছে:
“তোমরা ইতিকাফে থাকাকালে স্ত্রীদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়ো না…”

আরো পড়ুন: নবীর স্ত্রীদের নাম

ইসলামে সহবাসের নিয়ম ও পদ্ধতি

ইসলামে সহবাসের নিয়ম

সহবাসের আগে পবিত্রতা

  • ভালো করে ব্রাশ করা, যেন মুখ থেকে কোনো দুর্গন্ধ না আসে।
  • ভালো মানের গন্ধযুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত।
  • সহবাসের আগে ওজু বা গোসল করা সুন্নত, বিশেষত যদি কারো শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ থাকে।

স্বামীস্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা রোমান্স

  • ইসলামে সহবাস কেবল শারীরিক মিলন নয়, বরং এটি ভালোবাসা একটি বহি প্রকাশের ।
  • হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কেউ যেন স্ত্রী সহবাসের পূর্বে চুম্বন, আলিঙ্গন ও মিষ্টি কথা বলে।”

আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত

পায়ুপথে সহবাস ইসলাম কি বলে

স্বামী-স্ত্রী যেকোনো অবস্থানে সহবাস করতে পারেন, তবে এটি স্ত্রীর যৌনাঙ্গে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। পায়ুপথে সহবাস করা হারাম: হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করলো, সে আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত।”

ঋতুস্রাব বা মাসিক চলাকালীন সহবাস করা হারাম:মাসিকের সময় সহবাস করা হারাম।

সহবাসের পর করণীয়

প্রস্রাব করা (সুন্নত): রাসূল (সা.) বলেছেন: “যখন তোমাদের কেউ সহবাস করে, তখন সে যেন প্রস্রাব করে নেয়, এতে শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।”

অজু বা গোসল করা: সহবাসের পর সম্পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করা ফরজ। গোসল করা সম্ভব না হলে ,সেক্ষেত্রে অযু করে নেওয়া উত্তম।

সহবাসের পর আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা: সহবাসের পর আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা উচিত।

গোপনীয়তা বজায় রাখা: স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক অন্যের কাছে বলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

অশ্লীলতা হারাম কাজ থেকে বাঁচতে সহবাস গুরুত্বপূর্ণ: রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি বিয়ে করলো, সে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করলো।”

নেকির কাজ হিসেবে সহবাস: রাসূল (সা.) বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর সহবাসে সওয়াব রয়েছে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “যদি কেউ হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তবে সে গুনাহগার হয়। আর যদি হালাল উপায়ে করে, তবে সে সওয়াব লাভ করে।”

সন্তান চাওয়ার জন্য নিয়ত করা: সন্তান কামনা করে সহবাস করলে এটি নেকির কাজ হিসেবে গণ্য হয়।

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সহবাসকে শুধু শারীরিক চাহিদা মেটানো কথা বলা হয়নি, এটি সওয়াবের কাজ এবং ভালোবাসা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে দেখা হয়েছেসহবাস ইসলামিক নিয়ম মেনে করলে দাম্পত্য জীবন বরকতময় ও সুখী হবে।

আরো পড়ুন: আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ

রোজার দিনে সহবাস

ইসলামে রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ও যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা। রোজার দিনে সহবাস করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভেঙে যায় ।

আল্লাহ বলেন:”তোমাদের জন্য রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস হালাল করা হয়েছে… অতঃপর এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং যা আল্লাহ তোমাদের জন্য বৈধ করেছেন তা অনুসন্ধান করো।”

রোজার দিনে সহবাস করলে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে, এর জন্য তাকে কাফফারা দিতে হবে।

কাফফারার বিধান: রাসূল (সা.) বলেছেন: যদি কেউ রোজার দিনে সহবাস করে, তাহলে তাকে এই কাফফারা আদায় করতে হবে।

একটানা ৬০ দিন রোজা রাখা । যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে— ৬০ জন গরিবকে খাওয়ানো

রোজায় সহবাসের নিয়ম

রোজার দিনে সহবাসের নিয়ম

রোজা রেখে সহবাস করার নিয়ম হচ্ছে আপনি দিনের বেলা রোজা থাকা অবস্থায় সহবাস করতে পারবেন না, তবে ইফতারের পর থেকে সেহেরীর আগ পর্যন্ত সহবাস করতে পারবেন। এই সময় সহবাস করা ইসলামে বৈধ। তবে আপনি যদি ইতিকাফে থাকেন তাহলে সহবাস দিনে এবং রাতে যে কোন সময় হারাম। অর্থাৎ ইতেকাফ থাকাকালীন সহবাস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

আল্লাহ বলেন:”তোমরা ইতিকাফে থাকাকালীন স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না।”

আরো পড়ুন: আজকের সেহরি ও ইফতারের সময়

সহবাসের পর সেহরি খাওয়া যাবে কি

হ্যাঁ, সহবাসের পর সেহরি খাওয়া সম্পূর্ণ বৈধ ও হালাল। তবে শর্ত হলো, সহবাসের পর পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করতে হবে। তবে সময় কম থাকলে প্রথমে সেহরি খেয়ে পরে গোসল করা যেতে পারে।

  • সেহরির আগে বা পরে গোসল করা দুটোই বৈধ, তবে ফজরের আগে অবশ্যই গোসল করতে হবে।

সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয়

গর্ভধারণ নরীর একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা নারী ও পুরুষের প্রজনন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। সাধারণত, সহবাসের পর গর্ভধারণ হতে ৬-১২ দিন সময় লাগে, তবে এটি নারীর ডিম্বস্ফোটন এবং শুক্রাণুর স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে।

সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয় পিরিয়ডের কতদিন পর

গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ

সহবাসের ১০১৫ দিন পর গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে,  লক্ষণ গুলো নিচে দেওয়া হলো-

  • মাসিক বন্ধ হওয়া
  • খাবারের রুচির পরিবর্তন
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি
  • বমি বমি ভাব
  • বুকে ব্যথা

সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে

  • সহবাসের ৬-১২ দিনের মধ্যে গর্ভধারণ হতে পারে।
  • সহবাসের ১০-১৫ দিন পর গর্ভধারণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে

গর্ভধারণ নিশ্চিত করার উপায়:

সহবাসের কত দিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হয়: গর্ভধারণ নিশ্চিত করার জন্য আপনি নিচের পদ্ধতিগুলোর মাধ্যেমে জানতে পারবেন-

  • রক্ত পরীক্ষার  মাধ্যমে ৭-১০ দিনের মধ্যেও গর্ভধারণ নিশ্চিত করা যায়।
  • সহবাসের ১০-১৪ দিন পর গর্ভধারণ পরীক্ষার কিট (Pregnancy Test Kit) দিয়ে পরীক্ষা করা নিতে পারেন।

প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখে ধারণা পাওয়া যায়, তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তার দেখানো ভালো।

আরো পড়ুন: আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

পিরিয়ডের কতদিন পর সহবাস করলে গর্ভবতী হয়

কোন সময় সহবাস করলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, একজন নারীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে ওভুলেশন পিরিয়ডের সময়। এটি পিরিয়ড শুরুর ১২-১৬ দিন পর ঘটতে থাকে। এই সময়ে সহবাস করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

  • ওভুলেশন সাধারণত মাসিক চক্রের ১৪তম দিনে ঘটে, ( যাদের মাসিক চক্রটি ২৮ দিনের।
  • যাদের মাসিক চক্র ৩০ দিনের, তাদের ১৬তম দিনে ওভুলেশন হতে পারে।

বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের উপযুক্ত সময় নিচে টেবিলের মাধ্যেমে উপস্থাপন করা হলো-

নিয়মিত ২৮ দিনের মাসিক চক্রের হিসাব অনুযায়ী

১-৭ দিনপিরিয়ড চলাকালীন (সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কম
৮-১১ দিনগর্ভধারণের সম্ভাবনা কম, তবে কিছু ক্ষেত্রে সম্ভব
১২-১৬ দিন গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি (উর্বর সময়)
১৭-২৮ দিন গর্ভধারণের সম্ভাবনা কম, তবে অসম্ভব নয়

আরো পড়ুন: পৃথিবীর বয়স কত

মাসিকের কত দিন পর সহবাস করলে গর্ভবতী হয় না

কখন সহবাস করলে গর্ভধারণ হবে না: যে সময় গুলোতে সহবাস করলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে-

মাসিকের প্রথম দিন থেকে ৭ম দিন

  • পিরিয়ড চলাকালীন এবং পিরিয়ড শেষ হওয়ার ২-৩ সহবাস করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
  • তবে, যদি কারও মাসিক চক্র অনিয়মিত হয় বা খুব ছোট হয় (২১ দিনের কম), তাহলে এই সময়ে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

মাসিকের প্রথম ৭ দিন এবং ওভুলেশন পিরিয়ডের ৩-৪ দিন পর থেকে পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়াপর্যন্ত গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।

মাসিক হওয়ার কতদিন পর সহবাস করলে ছেলে সন্তান হয়

ওভুলেশনের খুব কাছাকাছি ১৪-১৬তম দিন সময়ে সহবাস করলে ছেলে সন্তানের সম্ভাবনা বেশি। বিজ্ঞান অনুযায়ী, শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করে পুরুষের শুক্রাণু। অর্থাৎ সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে সেটির জন্য দায়ী বাবা। এখানে মায়ের কোন ভূমিকা থাকে না। ছেলে সন্তান জন্ম হওয়ার জন্য বিভিন্ন গবেষণায় নিচের তথ্য গুলো উঠে এসেছে-

  • ডা. শিটলস পদ্ধতি অনুসারে, ওভুলেশনের খুব কাছাকাছি সময়ে (১৪-১৬তম দিন) সহবাস করলে ছেলে সন্তানের জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • তবে, চূড়ান্তভাবে ছেলে বা মেয়ে সন্তান হওয়া আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।

বিজ্ঞান কিছু সম্ভাবনা নির্ধারণ করতে পারে, তবে চূড়ান্ত ভাবে বলা সম্ভব না।

ইসলামে মাসিকের কতদিন পর সহবাস করা যায়

ইসলামে মাসিক শেষ হওয়ার পর সহবাসের করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হয়।

  • মাসিকের সমস্ত দিন শেষ হওয়া পর্যন্ত সহবাস করা নিষিদ্ধ।
  • তাই মাসিক সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পর সহবাস করতে হবে।
  • একটি মাসিক চক্র গড়ে ৩-৭ দিন হতে পারে, তবে মাসিকের দৈর্ঘ্য ভিন্ন হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় সহবাসের নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সহবাসের নিয়ম ৮ মাসের সময় কি সহবাস করা যায়

সহবাস স্ত্রীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আরও মজবুত করে। গর্ভের সন্তানের জন্য মায়ের সুখানুভূতি ভালো প্রভাব ফেলে

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে গর্ভাবস্থায় সহবাস

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা ইসলামে বৈধ, তবে তা স্ত্রী ও অনাগত শিশুর যেত ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কুরআনে বা হাদিসে গর্ভাবস্থায় সহবাস নিষিদ্ধ বলা হয়নি, তবে স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

রাসূল বলেছেন:
তোমাদের কেউ যেন স্ত্রীকে পশুর মতো আচরণ করে ব্যবহার না করে; বরং তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করুক।

হাদীস অনুযায়ী স্ত্রীর কষ্ট বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সহবাস থেকে বিরত থাকা উত্তম।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে গর্ভাবস্থায় সহবাস

  • গর্ভাবস্থায় সহবাস সাধারণত নিরাপদ।
  • শুক্রাণু জরায়ুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় সহবাসের সতর্কতা

স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বুঝে সহবাস করা। বেশি চাপে না রাখা ও স্বাভাবিকভাবে সহবাস করা।

গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসগর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই খুব বেশি চাপ সৃষ্টি করা ঠিক নয়।
৮ম-৯ম মাসএই সময় গর্ভধারণ পূর্ণতা পায়, তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

আরে পড়ুন: ইসলামিক ধাধা উত্তর সহ

গর্ভাবস্থায় আমল ও দোয়া

গর্ভাবস্থা আল্লাহর একটি মহান নিয়ামত এবং এটি নারীর জন্য বিশেষ মর্যাদার সময়। এই সময়ে নিয়মিত ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও ভালো কাজ করা উত্তম। গর্ভাবস্থায় আমল নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • গর্ভাবস্থায় নিয়মিত নামাজ আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক কষ্ট থাকলে কোরআনে বসে বা শুয়ে নামাজ পড়ার অনুমতি আছে । তাই বসে হলেও নামাজ আদায় করুন।
  • সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি ও সুরা ফালাক-নাস পড়ে প্রতিদিন ফুঁ দেওয়া।
  • সন্তানের সুস্বাস্থ্য কামনায় দান-সদকা করা উত্তম।
  • সঙ্গীত বা অবৈধ বিনোদন এড়িয়ে চলা উচিত।
  • গর্ভাবস্থায় মায়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়।তাই এ সময় বেশি বেশি করে দোয়া করুন। বিশেষ করে সন্তানের ভালো ভবিষ্যৎ, নেককার হওয়া এবং সুস্থতার জন্য দোয়া করুন।
  • কুরআনের সুরা ইউসুফ ও সুরা মারিয়াম বেশি বেশি পড়া সুন্নত।
  • মিথ্যা, পরচর্চা, ঝগড়া-বিবাদ ও হারাম খাবার থেকে দূরে থাকা জরুরি।
  • গরিব-দুঃখীদের দান করলে সন্তানও বরকতপূর্ণ হবে।
  • গর্ভাবস্থায় দুঃশ্চিন্তা ও ভয় না করা।

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়

বাচ্চার গায়ের রং মূলত জিনগত কারণে নির্ধারিত হয়। তবে, গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার ও সুন্নত উপায়ে কিছু আমল করলে শিশুর ত্বক স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার শিশুর উজ্জ্বল ত্বকের জন্য উপকারী সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-

দুধ ও কেশরগর্ভাবস্থায় কেশর মিশ্রিত দুধ পান করলে শিশুর ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল হতে পারে।
নারকেল পানিএটি ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য । নিয়মিত সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস নারকেল পানি পান করা ভালো।
আজওয়া খেজুর ও মধুনবীজি খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মধু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং এটি সুন্নত খাদ্য।
কাঠবাদামবাদামে ভিটামিন E ও ওমেগা-৩ থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও ত্বকের জন্য ভালো। প্রতিদিন ৪-৫টি কাঠবাদাম খেতে পারেন।
ফল ও সবুজ শাকসবজিপেঁপে ব্যতীত সব ধরনের ফল খেতে পারেন, বিশেষ করে কমলা, আপেল, আঙুর এবং গাজর।ভিটামিন C সমৃদ্ধ ফল ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
গাজরগাজর রক্ত পরিষ্কার করে এবং শিশুর ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে পারে।
ভিটামিন সি ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবারলেবু, কমলা, টমেটো, ব্রোকলি, আমলকি ইত্যাদি খেলে শিশুর ত্বক উজ্জ্বল হয়।

গর্ভাবস্থায় কিছু আমল

  • সুরা ইউসুফ বেশি বেশি তিলাওয়াত করা (সুন্দর সন্তান কামনায়)।
  • আয়াতুল কুরসি, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে নিজের ও সন্তানের ওপর দম করা।
  • সুরা মারিয়াম পড়া (সন্তান জন্ম সহজ করার জন্য)।
  • গুনাহ থেকে দূরে থাকা ও ভালো কাজ করা।

আরো পড়ুন: দোয়া কুনুত | Dua qunoot bangla

কতক্ষণ সহবাস করা উচিত

সহবাসের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা ইসলামে নির্ধারিত নেই। তবে এটি স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোভাসা স্বাচ্ছন্দ্য, সন্তুষ্টি ও শারীরিক ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। সহবাসের আদর্শ সময় বা কত সময় ধরে সহবাস করলে স্ত্রী পূর্ণ তিপ্তি পাবে তা নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

  • পূর্বপ্রস্তুতি বা ফোরপ্লে ১০-৩০ মিনিট ইসলামে ফোরপ্লে বা স্ত্রীর উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সুন্নত।

হাদিসে এসেছে:
তোমাদের কেউ যেন তার স্ত্রী সহবাসের জন্য পশুর মতো আচরণ না করে। বরং এর আগে আদরসোহাগ করুক। (ইবনে মাজাহ ১৯৭৭)

স্ত্রী যেন সহবাসে পূর্ণ তৃপ্তি পায়, এজন্য স্বামীকে ধৈর্য ধরতে হবে। মূল সহবাস সময় ৫-২৫ মিনিট হওয়া উত্তম। গবেষণা মতে, অধিকাংশ দম্পতির জন্য সহবাসের সময় ৭-১৫ মিনিট যথেষ্ট।

  • ২ মিনিটের কম হলে এটি দ্রুত পতন যৌন দূর্বলতা বলে ধরা হয়।
  • সহবাসের পর বিশ্রাম ও আদর – ৫-১৫ মিনিট করা উত্তম।

সহবাসের পর সঙ্গীকে সময় দেওয়া ও মানসিকভাবে শান্ত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে আবু দাউদ শরীফে একটি হাদিস এসেছে, রাসূল বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন স্ত্রীকে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে রেখে একা ছেড়ে না দেয়।”

সহবাসের আদর্শ সময় কার জন্য কেমন?

বয়স অনুযায়ী: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সহবাসের সময় কিছুটা পরিবর্তন হয়ে কমতে পারে।

নতুন দম্পতিদের জন্য: প্রথম দিকে সময় স্বাভাবিকের তুলনায় কম লাগতে পারে, কারণ ঐ সময়ে উত্তেজনা বেশি কাজ করে।

প্রাপ্তবয়স্ক ও অভিজ্ঞদের জন্য: সাধারণত ১০-২০ মিনিট সহবাস স্বাভাবিক ও তৃপ্তিকর হয়।

আরো পড়ুন: ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ

অধিক সময় সহবাসের পদ্ধতি ও দোয়া

দোয়া ও সুন্নত পদ্ধতি অনুসরণ করুন: সহবাসের আগে ও পরে দোয়া পড়া কল্যাণকর।

স্বাস্থ্যকর খাবার খান: বাদাম, মধু, কালোজিরা, খেজুর ইত্যাদি খাওয়া উপকারী।

একসঙ্গে সন্তুষ্টির চেষ্টা করুন: স্বামী-স্ত্রী উভয়ের আনন্দ নিশ্চিত করা জরুরি।

ফোরপ্লে দীর্ঘ করুন: সহবাসের আগে বেশি সময় নিলে সময় নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।

দ্রুত পতন এড়াতে মাঝে মাঝে থামুন: এটি সহবাসের সময় বাড়াতে সাহায্য করে।

উপসংহার

সহবাস শুধু শারীরিক সম্পর্কের বিষয় নয়, বরং পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মতি, ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। স্বাস্থ্যকর ও সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য উন্মুক্ত আলোচনা, শিক্ষা এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব অপরিহার্য। সমাজের ট্যাবু ভেঙে এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করলে, সম্পর্ক আরও সুস্থ ও গভীর হবে। ধন্যবাদ পুরো আর্টিকেলটি মনেযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *