কৃৎ প্রত্যয় কাকে বলে

কৃৎ প্রত্যয়

ক্রিয়ামূলকে বলা হয় ধাতু, আর ধাতুর সঙ্গে পুরুষ ও কালবাচক বিভক্তি যোগ করে গঠন করা হয় ক্রিয়াপদ।

ধাতুর সঙ্গে যখন কোনো ধ্বনি বা ধ্বনি-সমষ্টি যুক্ত হয়ে বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ তৈরি হয়, তখন (১) ক্রিয়ামূল বা ধাতুকে বলা হয় ক্রিয়া প্রকৃতি বা প্রকৃতি; আর (২) ক্রিয়া প্রকৃতির সঙ্গে যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয়, তাকে বলে কৃৎ-প্রত্যয়। যেমন-

চল্ (ক্রিয়া প্রকৃতি) + অন্ত (কৃৎ-প্রত্যয়)=চলন্ত (বিশেষণ পদ)।চল্ (ক্রিয়া প্রকৃতি)+ অন (কৃৎ-প্রত্যয়)= চলন (বিশেষ্য পদ) ।

এ প্রকৃতি চিহ্নটি ( √ ) ব্যবহার করলে ‘প্রকৃতি’ শব্দটি লেখার প্রয়োজন হয় না। যেমন-

√নাচ্+উনে = নাচুনে√পড়+ উয়া =পড়ুয়া

কৃৎ-প্রত্যয় সাধিত পদটিকে বলা হয় কৃদন্ত পদ। যেমন – ওপরের উদাহরণে ‘পড়ুয়া’ ও ‘নাচুনে’ কৃদন্ত পদ। তৎসম বা সংস্কৃত প্রকৃতির সঙ্গেও অনুরূপভাবে কৃৎ-প্রত্যয় যোগে কৃদন্ত পদ সাধিত হয়। যেমন-

√কৃ+তব্য-কর্তব্য √গম্+অন=গমন

গুণ ও বৃদ্ধি বলতে কী বোঝায়

কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৃৎ-প্রত্যয় যোগ করলে কৃৎ-প্রকৃতির আদিস্বর পরিবর্তিত হয়। এ পরিবর্তনকে বলা হয় গুণ ও বৃদ্ধি ।

গুণ

(ক) ই, ঈ-স্থলে এ, (খ) উ, ঊ-স্থলে ও এবং (গ) ঋ-স্থলে অর্ হয়। যেমন-

কৃ+তা = করতা> কর্তা (ঋ স্থলে অর্)।√ধু+আ =ধোয়া (উ স্থলে ও)
√চিন্+আ=চেনা (ই স্থলে এ হলো)√নী+আ=নেওয়া (ঈ স্থলে এ);

বৃদ্ধি

(ক) অ-স্থলে আ, (খ) ই ও ঈস্থলে ঐ, (গ) উ ও ঊ স্থলে ঔ এবং (ঘ) ঋ-স্থলে আর্ হয়। যেমন-

পচ্ + অ (ণক) = পাচক (পচ-এর অ স্থলে ‘আ’)শিশু+ অ(ষ্ণ) = শৈশব (ই স্থলে ঐ);
যুব+ অন= যৌবন (উ স্থলে ঔ)কৃ+ঘ্যণ= কার্য (ঋ স্থলে আর্)

বাংলা কৃৎ-প্রত্যয় কৃৎ-প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন

১. (০) শূন্য-প্রত্যয় : কোনো প্রকার প্রত্যয়-চিহ্ন ব্যতিরেকেই কিছু ক্রিয়া-প্রকৃতি বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ রূপে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। এরূপ স্থলে (০) শূন্য প্রত্যয় ধরা হয়। যেমন-

এ মোকদ্দমায় তোমার জিত্ হবে না, হার্–ই হবে।গ্রামে খুব ধর্ পাকড় চলছে।

২. অ-প্রত্যয় : কেবল ভাববাচ্যে অ-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন –

√মার +অ=মার।√ধর্+ অ=ধর

আধুনিক বাংলায় অ-প্রত্যয় সর্বত্র উচ্চারিত হয় না। যেমন-

√জিত্ + অ = জিত√হার্ + অ=হার

৩. অন্-প্রত্যয় : ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে ‘অন’ প্রত্যয়ের ব্যবহার হয়। যেমন –

√কাঁদ্ + অন= কাঁদন নাচন, দোলন বাড়ন, ঝুলন

বিশেষ নিয়ম

(ক) আ-কারান্ত ধাতুর সঙ্গে অন্ স্থলে ‘ওন’ হয়। যেমন

√খা+অন=খাওন√ছা+অন=ছাওন

(খ) আ-কারান্ত প্রযোজক (ণিজন্ত) ধাতুর পরে ‘আন’ প্রত্যয় যুক্ত হলে ‘আনো’ হয়। যেমন:-

√জানা+আন= জানানো।শোনানো, ভাসানো

অনা-প্ৰত্যয় :

√খে + অনা=খেলনা√দুল্ + অনা= দুলনা> দোলনা।

অন্ত-প্রত্যয়

√ডুব্+অন্ত=ডুবন্ত√উড়+অন্ত =উড়ন্ত

না-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে ‘না’ প্রত্যয় যুক্ত হয়।

√রাধ+না=রাধনা> রান্নাঝরনা

তা—প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ‘তা’ প্রত্যয় হয়। যেমন –

√বহ্+ তা = বহতা, √পড় + তা= পড়তা,√ফির্+তা = ফিরতা> ফেরতা

উ-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘উ’ প্রত্যয়ের প্রয়োগ হয়। যথা –

√উড়+উ= উড়ু (দ্বিত্ব উড়ুউডু), ঝাড় + উ= ঝাড়ু√ডাক্ + উ= ডাকু

ই-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে ‘ই’ প্রত্যয় প্রযুক্ত হয়। যথা-

√ভাজ্‌+ই = ভাজি√বেড়+ই= বেড়ি

আন (আনো) প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে প্রযোজক ধাতু ও কর্মবাচ্যের ধাতুর পরে ‘আন/আনো’ প্রত্যয় হয় । যেমন–

√মান্+ আন =মানান/মানানো।√চাল্‌ =আন =চালান/চালানো।

আই-প্রত্যয় : ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ‘আই প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন-

সিল+আই=সিলাই> সেলাইচড়ু+আই = চড়াই

অক-প্রত্যয় :

√ঝল্+অক=ঝলক√মুড়+অক=মোড়ক

অনি, (বিকল্পে) উনি-প্রত্যয় :

√ চির্+অনি=চিরনি>চিরুনি√বাঁধ+অনি=বাঁধনি বাঁধুনি

আ-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘আ’ প্রত্যয় হয়।

√পড়+আ=পড়া (পড়া বই)। রাঁধা (বিশেষণ), কেনা, বেচা, রাঁধ (বিশেষ্য), ফোটা ইত্যাদি।

আও-প্রত্যয় : ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ‘আও’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-

√চড় +আও=চড়াও√পাকড়+আও= পাকড়াও

আনি-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে প্রযুক্ত হয়। যেমন-

√উড়+উনি=উড়ুনি, √শুন্+আনি=শুনানি√জান্ + আনি=জানানি, √উড় + আনি=উড়ানি,

আল-প্রত্যয় :

√মিশ্+আল =মিশাল√মাত্+আল = মাতাল

ইয়া > ইয়ে-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ইয়া/ ইয়ে প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন –

√বল্ + ইয়ে=বলিয়ে (বাকপটু)√মর্ +ইয়া মরিয়া (মরতে প্রস্তুত)

‘উয়া’ বিকল্পে ‘ও’ – প্রত্যয় : বিশেষ্য বিশেষণ গঠনে ‘উয়া’ এবং ‘ও’ প্রত্যয় হয়। যথা –

√উড়+ও +উড়ো (চিঠি)।√পড় + উয়া= পড়ুয়া > পড়ো

তি-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘তি’ প্রত্যয় হয় । যেমন-

কাটতি, উঠতি√বাড়+তি=বাড়তি।

সংস্কৃত কৃৎ-প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন

ক্ত-প্রত্যয় (‘ক্’ ইৎ ‘ত’ থাকে)

√জ্ঞা+ক্ত (জ্ঞা+ত) = জ্ঞাত√খ্যা+ক্ত=খ্যাত।

অনট্—প্রত্যয় : (‘ট’ ইৎ (বিলুপ্ত) হয়, ‘অন’ থাকে) :

√নী+অনট্= √নী+অন>নে+অন (গুণসূত্রে) = নয়নVশু+ অনট্= √শু+অন (গুণ ও সন্ধির ফলে) = শ্রবণ
  • ক্তি-প্রত্যয় (‘ক’ ইৎ ‘তি’ থাকে) :
√গম্+ ক্তি=√গম্+তি=গতি (এখানে ‘ম’ লোপ হয়েছে)

তব্য ও অনীয় প্রত্যয় : কর্ম ও ভাববাচ্যের ধাতুর পরে (ক) তব্য ও (খ) অনীয় প্রত্যয় হয়।

(ক) তব্য :

√কৃ+তব্য=কর্তব্য, √দা+তব্য=দাতব্য, √পর্+তব্য=পঠিতব্য।

(খ) অনীয় :

√কৃ+অনীয়=করণীয় দর্শনীয়, পানীয়

তৃচ্-প্রত্যয় (‘চ’ ইৎ ‘তৃ’ থাকে) : প্রথমা একবচনে ‘তৃ’ স্থলে ‘তা’ হয়। যেমন-

√দা+তৃচ্=√দা+তৃ=√দা+তা= দাতা √মা+তৃচ্=মাতা√ক্রী+তৃচ্=ক্রেতা।

ইন্‌ প্রত্যয় (ইন্)—ঈ-কার হয়) :

√শ্রম্+ইন্=শ্রমী।

অল্-প্রত্যয় (ল ইৎ, অ থাকে) :

√জি+অল্‌=জয়, √ক্ষি+অল্ = ক্ষয়। ভয়, নিচয়, বিনয়, ভেদ। ব্যতিক্রম : √হণ্+অ=বধ

কৃদন্ত বিশেষণ গঠনে কতিপয় কৃৎ-প্রত্যয়

শানচ্—প্রত্যয় (‘শ’ ও ‘চ’ ইৎ, ‘আন’ বিকল্পে ‘মান’ থাকে) :√দীপ্+ শানচ্=দীপ্যমান।√চল্‌+শানচ্=চলমান, √বৃধু+শানচ্=বর্ধমান।
ইষ্ণু—প্রত্যয় : √চল্‌+ইষ্ণু = চলিষ্ণু, ক্ষয়িষ্ণু, বর্ধিষ্ণু।
বর-প্রত্যয় : Vঈশ্+বর=ঈশ্বর, Vভাস্+বর =ভাস্বর,নশ্বর, স্থাবর।
র-প্রত্যয় :√হিন+স্+র=হিংস্র, /নম্+র=নম্র।
উক/উক—প্রত্যয় :√ভু+উক=(ভৌ+উক) =ভাবুক

আরো পড়ুন:- ধাতু: মৌলিক ধাতু এবং সাধিত ধাতু

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *