ভালো এবং খারা মানুষের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে, যার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট। তাই এককথায় কাউকে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করা খুব কঠিন । ঐতিহাসিকভাবে, কিছু ব্যক্তিকে তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে সবচেয়ে খারাপ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেমন স্বৈরশাসক, অপরাধী, অথবা বড় ধরনের নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিগণ।
আডলফ হিটলার ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত এবং নিন্দিত ব্যক্তি। আমার দৃষ্টিতে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ আডলফ হিটলার( Adolf Hitler )। তিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং নাৎসি দলের নেতা ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, যা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধগুলোর মধ্যে অন্যতম।
পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ মানুষের তালিকা
ক্রমিক | নাম | দেশ |
১ | আডলফ হিটলার( Adolf Hitler ) | জার্মান |
২ | জোসেফ স্টালিন (Joseph Stalin) | সোভিয়েত ইউনিয়ন |
৩ | মাও সেতুং (Mao Zedong) | চীন |
৪ | ইডি আমিন | উগান্ডা |
৫ | পল পট (Pol Pot) | কম্বোডিয়া |
৬ | লিওপল্ড (King Leopold II) | বেলজিয়াম |
৭ | বেনিতো মুসোলিনি | ইতালি |
৮ | কিম জং-ইল এবং কিম জং-উন | উত্তর কোরিয়া |
৯ | ইয়াসুকুনি তোমোতা | জাপান |
১০ | ইভান দ্য টেরিবল | রাশিয়া |
১১ | কেম্পি ফুসে | আফ্রিকান |
১২ | হ্যারি হেডলি | যুক্তরাষ্ট্র |
১৩ | লুইস গারাভিতো | কলম্বিয়া |
১৪ | পেদ্রো লোপেজ | কলম্বিয়া, পেরু |
১৫ | মিখাইল পপকভ | রাশিয়া |
১৬ | আবুল জাবার | আফগানিস্থান |
১৭ | আন্দ্রেই চিকাতিলো | সোবিয়েত ইউনিয়ন |
১৮ | গ্যারি রিডগওয়ে | আমেরিকা |
১৯ | আলেকজান্ডার পিচুশকিন | রাশিয়া |
২০ | ওয়াং কিয়াং | চীন |
- আডলফ হিটলার ( Adolf Hitler ): আডলফ হিটলার ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং নাৎসি দলের প্রধান নেতা ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধগুলোর মধ্যে একটি।
হিটলারের শাসনকালে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণহত্যা ঘটে। এই সময়ে প্রায় ৬০ লাখ ইহুদি এবং আরও লাখ লাখ রোমা রাজনৈতিক বিরোধী এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর বর্ণবাদী এবং একনায়কতান্ত্রিক নীতিগুলো মানবতার ওপর গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
তাঁর কাজ এবং সিদ্ধান্তগুলোর ফলে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি, ধ্বংসযজ্ঞ, এবং অমানবিক কষ্ট সৃষ্টি হয়েছিল। এই কারণেই হিটলারকে ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ নেতাদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষের কে?
- জোসেফ স্টালিন (Joseph Stalin): জোসেফ স্তালিন (১৮৭৮ – ১৯৫৩) ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম প্রভাবশালী এবং বিতর্কিত নেতা। তার প্রকৃত নাম ছিল ইসিফ জুগাশভিলি। তিনি জর্জিয়ার গরি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। লেনিনের মৃত্যুর পর তিনি সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
স্তালিনের শাসনামল সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেও তার নীতির কারণে কোটি মানুষের মৃত্যু, দমননীতি এবং ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঘটনা ঘটে।
- মাও সেতুং (Mao Zedong): মাও সেতুং হুনান প্রদেশের শাওশান গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।১৯২১ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (CPC) প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত হন।মাওয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি চীনের গৃহযুদ্ধে জাতীয়তাবাদী কুওমিনটাং দলকে পরাজিত করে।
দ্রুত শিল্পায়ন এবং কৃষিক্ষেত্রে সমবায় চালানোর জন্য চালু করা হয়। কিন্তু এই নীতি ব্যর্থ হওয়ার ফলে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ এবং লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। মাও সেতুং চীনের ইতিহাসে “জাতির জনক” হিসেবে স্বীকৃত, কারণ তার নেতৃত্ব চীনকে একটি ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
- পল পট (Pol Pot)
পল পট ছিলেন কম্বোডিয়ার খেমার রুজ দলের নেতা এবং ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর একনায়ক। পল পটের আসল নাম ছিল সলথ সার। তিনি কম্বোডিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার শাসন আমলে দুর্ভিক্ষ, অতিরিক্ত পরিশ্রম, এবং রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযানের ফলে ১৫-২০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এটি কম্বোডিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। তার শাসনের সময়কালের গণহত্যা “কম্বোডিয়ার কিলিং ফিল্ডস” নামে পরিচিত।
- লিওপল্ড (King Leopold II)
১৮৬৫ সালে পিতার মৃত্যুর পর বেলজিয়ামের সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৮৮৫ সালে বার্লিন সম্মেলনের মাধ্যমে আফ্রিকায় কঙ্গো অঞ্চলের ওপর ব্যক্তিগত শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কঙ্গোতে তার শাসন ছিল নিষ্ঠুর ও মানবতাবিরোধী।আনুমানিক ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয় তার শাসনের কারণে, যা তাকে ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস শাসক হিসেবে পরিচিত করেছে।
- ইদি আমিন ( Idi Amin )
ইদি আমিন উগান্ডার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আমিন তার রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মমভাবে দমন করেন।তার শাসনামলে আনুমানিক ১ থেকে ৫ লাখ মানুষ নিখোঁজ বা নিহত হয়, যার মধ্যে সাধারণ জনগণ, সামরিক কর্মী, এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
শেষকথা: এই তালিকা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি করা হয়েছে, এ তালিকাটি চূড়ান্ত বা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ তালিকাটি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং এমন নেতিবাচক কার্যকলাপ প্রতিরোধে সচেতন সৃষ্টি করা।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর বয়স কত, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ