রোজার জন্য পান করা বা খাবার পরিত্যাগ করা যেমন ফরজ, তেমনি রোজার নিয়ত করাও ফরজ। কিন্তু নিয়ত মুখে পড়া ফরজ নয়। শুধু যদি মনে মনে চিন্তা করে সংকল্প করে যে, আমি আজ আল্লাহর নামে রোজা রাখব তবে তাতেই রোজা হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কেউ মনের চিন্তা এবং সংকল্পের সঙ্গে মুখেও বাংলায় বা আরবিতে নিয়ত পড়ে নেয় তবে তাও শুদ্ধ হবে।
আরো পড়ুন:- ইফতারের দোয়া আরবি এবং বাংলা
রোজার নিয়ত বিভিন্ন মাসায়েল
যদি কেউ সারা দিন কোন কিছু পানাহার না করে, হয়ত ক্ষুধাই লাগেনি বা অন্য কোনো কারণে খাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি, তবে তার রোজা হবে না; অবশ্য যদি মনে মনে রোজা রাখার ধারণা হত, তবে রোজা হয়ে যেত।
শরীয়া বিধান মতে, সুবহে সাদেক থেকে রোজা শুরু হয়, কাজেই সুবহে সাদেক না হওয়া পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাস জায়েয আছে।
অনেকে শেষরাতে সেহরী খাওয়ার পর এবং রোজা নিয়ত করে নেয়ার পর রাত থাকা সত্ত্বেও খাওয়া দাওয়া বা স্ত্রী সংগম করাকে না জায়েজ মনে করে, তা ভুল ধারণা।
সুবহে সাদেক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সব জায়েজ আছে, নিয়ত করুক বা না করুক। তবে সুবহে সাদেক হয়ে যাওয়ার সন্দেহ হলে এসব না করাই উত্তম।
রমজানের রোজার নিয়ত
যদি রাত হতে রমযানের রোজার নিয়ত করে, তবুও ফরজ আদায় হয়ে যায়। ধরা যাক, রাতে রোজা রাখার নিয়ত ছিল না, বরং ভোর হয়ে গেল, তবুও এই খেয়ালেই রইল যে, আজ রোজা রাখব না।
অতঃপর বেলা বাড়লে খেয়াল হল যে, ফরজ রোজা ছেড়ে দেয়া অন্যায় । অতঃপর রোজার নিয়ত করল, তবুও রোজা হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সকালে কিছু পানাহার করে থাকে, তবে এখন আর নিয়ত করতে পারে না।
যদি কিছু পানাহার না করে থাকে, তবে দিনের দ্বিপ্রহরের ১ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত রমযানের রোজার নিয়ত করা দুরস্ত আছে । যদি খাস করে রমযান শরীফের রোযা বা ফরজ রোযা বলে নিয়্যত না-ও করে,
শুধু এতটুকু নিয়ত করে যে, আজ আমি রোজা রাখব অথবা রাতে মনে মনে বলে যে, আগামীকাল আমি রোযা রাখব, তবে তাতেই রমযানের রোজা সহীহ্ হয়ে যাবে।
কেউ যদি রমযান শরীফে রমযানের রোযা না রেখে নফল রোযা রাখার নিয়ত করে এবং মনে করে যে, নফল রোযা এখন রেখে নেই, রমযানের রোযা পরে কাযা করে নেব, তবে তার রমযানের ফরজ রোযা আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু নফল হবে না।
বিগত রমজানের রোজা কোনো কারণে ছুটে গেল, সারা বছর কাযা রোযা রাখেনি, এখন রমজান মাস এসে পড়েছে; যদি এই রমযানে গত রমযানের কাযা রোজা নিয়ত করে;
তবে এই রমযানের রোজাই হবে, গত রমযানের কাযা হবে না, বরং সে রোযা রমযানের পর কাযা করতে হবে।
কেউ মান্নত মেনেছিল যে, আমার অমুক কাজ হয়ে গেলে আমি আল্লাহর নামে দুটি বা একটি রোজা রাখব, তারপর তার চাওয়া পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু মান্নতের রোজা রাখেনি ।
অতঃপর যখন রমজান এসেছে, তখন ঐ রোজা রাখতে ইচ্ছা করল । তখন যদি মান্নতের রোজার নিয়ত করে, রমজানের রোজার নিয়ত না করে, তবে রমজানের রোজাই আদায় হবে;
মান্নতের রোজা আদায় হবে না। মান্নতের রোজা রমজানের পর রাখতে হবে। মোটকথা, রমজান মাসে যে কোনো রোজাই নিয়ত করুক না কেন, রমজানের রোজাই হবে, এ মাসে অন্য কোনো রোজা রাখা যাবে না।
আরো পড়ুন:- তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত, মোনাজাত এবং দোয়া