রোজার নিয়ত হল আল্লাহর রাস্তায় রোজা রাখার সংকল্প বা ইচ্ছা করা। এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। রোজা রাখার উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা বা মানসিকভাবে স্থির করা, যাতে রোজা রাখার সময় এটি আল্লাহর ইবাদত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়।
রোজার জন্য পান করা বা খাবার পরিত্যাগ করা যেমন ফরজ, তেমনি রোজার নিয়ত করাও ফরজ। কিন্তু নিয়ত মুখে পড়া ফরজ নয়। শুধু যদি মনে মনে চিন্তা করে সংকল্প করে যে, আমি আজ আল্লাহর নামে রোজা রাখব তবে তাতেই রোজা হয়ে যাবে।
নিয়ত আপনার মনোভাব পরিবর্তন করে, কারণ এটি আপনাকে রোজার প্রতি সত্যিকারের ত্যাগ এবং আত্মবিশ্বাসী মনে সাহায্য করে। আপনি বুঝতে পারেন যে, এটি শুধুমাত্র শারীরিক ত্যাগ নয়, বরং আত্মিক এক ধরনের প্রশিক্ষণ যা আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করবে।

কিন্তু যদি কেউ মনের চিন্তা এবং সংকল্পের সঙ্গে মুখেও বাংলায় বা আরবিতে নিয়ত পড়ে নেয় তবে তাও শুদ্ধ হবে। নিচে রোজার নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ আলোচনা করা হয়েছে-

রোজার নিয়ত কি মুখে করতে হবে? এটি একান্তই আপনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। মুখে উচ্চারণ না করলেও, অন্তরে স্থির সংকল্প করলেই রোজা হয়ে যায়। তবে যদি কেউ মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করে, তাও শুদ্ধ হবে এবং ইবাদতের উদ্দেশ্য আরও দৃঢ় হবে।
আরো পড়ুন:- ইফতারের দোয়া আরবি এবং বাংলা
রোজার নিয়ত কেন করবেন
রোজা রাখার নিয়ত করতে পারলে আপনি শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিকভাবে প্রস্তুত হন। এর মাধ্যমে আপনি রোজার পুরো মাসে আপনি কতটা দৃঢ়তার সাথে ইবাদত করতে পারবেন, তা নিয়ত করার সময়ই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তৈরি হয়ে যায়।
- নিয়ত করলে আপনার মনে এবং হৃদয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য জাগ্রত হয়। এটি ঈমানের শক্তি বৃদ্ধি করে, কারণ আপনি মনে মনে স্থির করেন যে আপনি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য রোজা রাখবেন, যা আপনার সৎ উদ্দেশ্য ও বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে তোলে।
আরো পড়ুন: আজকের সেহরি ও ইফতারের সময়
- রোজা শুধু এক ধরনের শারীরিক ত্যাগ নয়, এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এক মহান ইবাদত। নিয়ত করার মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয় যে, আপনি আল্লাহর জন্য রোজা রাখবেন, শুধুমাত্র খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকবেন না, বরং আত্মিক শুদ্ধতা অর্জনের জন্যও এই রোজা রাখবেন।
- নিয়ত ছাড়া রোজা শুদ্ধ হয় না। ইচ্ছার ভিত্তিতে করা এই ইবাদত আল্লাহর কাছে পূর্ণাঙ্গ হয়, কারণ নিয়ত করা একধরনের আত্মিক প্রস্তুতি এবং ইবাদতের প্রস্তুতি। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ইবাদতকে পছন্দ করেন, যখন সে তার কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ও নিষ্ঠার সাথে করে।

রোজার নিয়তের গুরুত্ব
উৎসাহ ও শক্তি প্রদান: যখন আপনি রোজার জন্য নিয়ত করেন, তখন একটি গভীর উদ্দেশ্য আপনার মধ্যে জাগ্রত হয়। এটি আপনাকে রোজা পালন করতে আরও শক্তি দেয়।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন: আপনি যখন নিয়ত করেন, তখন আপনি শুধুমাত্র শরীরের ক্ষুধা ও তৃষ্ণা থেকে বিরত থাকবেন না, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবেন।
আত্মশুদ্ধি: রোজার নিয়ত করার মাধ্যমে আপনি আপনার আত্মাকে শুদ্ধ করতে শুরু করেন। আপনি শুধু বাহ্যিকভাবে রোজা রাখেন না, অন্তরেও শুদ্ধতার পথে হাঁটেন।
আরো পড়ুন: রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ
রোজার মর্ম উপলব্ধি: নিয়ত করার মাধ্যমে রোজার প্রকৃত অর্থ বুঝতে সাহায্য হয়। এটা শুধু খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকার ব্যাপার নয়, বরং এটি পুরো জীবনশৈলীকে আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার দিকে পরিচালিত করে।

রোজার নিয়ত বিভিন্ন মাসায়েল
যদি কেউ সারা দিন কোন কিছু পানাহার না করে, হয়ত ক্ষুধাই লাগেনি বা অন্য কোনো কারণে খাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি, তবে তার রোজা হবে না; অবশ্য যদি মনে মনে রোজা রাখার ধারণা হত, তবে রোজা হয়ে যেত।
- শরীয়া বিধান মতে, সুবহে সাদেক থেকে রোজা শুরু হয়, কাজেই সুবহে সাদেক না হওয়া পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাস জায়েয আছে।
- অনেকে শেষরাতে সেহরী খাওয়ার পর এবং রোজা নিয়ত করে নেয়ার পর রাত থাকা সত্ত্বেও খাওয়া দাওয়া বা স্ত্রী সংগম করাকে না জায়েজ মনে করে, তা ভুল ধারণা।
- সুবহে সাদেক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সব জায়েজ আছে, নিয়ত করুক বা না করুক। তবে সুবহে সাদেক হয়ে যাওয়ার সন্দেহ হলে এসব না করাই উত্তম।

রমজানের রোজার নিয়ত
যদি রাত হতে রমযানের রোজার নিয়ত করে, তবুও ফরজ আদায় হয়ে যায়। ধরা যাক, রাতে রোজা রাখার নিয়ত ছিল না, বরং ভোর হয়ে গেল, তবুও এই খেয়ালেই রইল যে, আজ রোজা রাখব না।
- অতঃপর বেলা বাড়লে খেয়াল হল যে, ফরজ রোজা ছেড়ে দেয়া অন্যায় । অতঃপর রোজার নিয়ত করল, তবুও রোজা হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সকালে কিছু পানাহার করে থাকে, তবে এখন আর নিয়ত করতে পারে না।
- যদি কিছু পানাহার না করে থাকে, তবে দিনের দ্বিপ্রহরের ১ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত রমযানের রোজার নিয়ত করা দুরস্ত আছে । যদি খাস করে রমযান শরীফের রোযা বা ফরজ রোযা বলে নিয়্যত না-ও করে,
- শুধু এতটুকু নিয়ত করে যে, আজ আমি রোজা রাখব অথবা রাতে মনে মনে বলে যে, আগামীকাল আমি রোযা রাখব, তবে তাতেই রমযানের রোজা সহীহ্ হয়ে যাবে।
- কেউ যদি রমযান শরীফে রমযানের রোযা না রেখে নফল রোযা রাখার নিয়ত করে এবং মনে করে যে, নফল রোযা এখন রেখে নেই, রমযানের রোযা পরে কাযা করে নেব, তবে তার রমযানের ফরজ রোযা আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু নফল হবে না।
- বিগত রমজানের রোজা কোনো কারণে ছুটে গেল, সারা বছর কাযা রোযা রাখেনি, এখন রমজান মাস এসে পড়েছে; যদি এই রমযানে গত রমযানের কাযা রোজা নিয়ত করে; তবে এই রমযানের রোজাই হবে, গত রমযানের কাযা হবে না, বরং সে রোযা রমযানের পর কাযা করতে হবে।
- কেউ মান্নত মেনেছিল যে, আমার অমুক কাজ হয়ে গেলে আমি আল্লাহর নামে দুটি বা একটি রোজা রাখব, তারপর তার চাওয়া পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু মান্নতের রোজা রাখেনি । অতঃপর যখন রমজান এসেছে, তখন ঐ রোজা রাখতে ইচ্ছা করল । তখন যদি মান্নতের রোজার নিয়ত করে, রমজানের রোজার নিয়ত না করে, তবে রমজানের রোজাই আদায় হবে;
মান্নতের রোজা আদায় হবে না। মান্নতের রোজা রমজানের পর রাখতে হবে। মোটকথা, রমজান মাসে যে কোনো রোজাই নিয়ত করুক না কেন, রমজানের রোজাই হবে, এ মাসে অন্য কোনো রোজা রাখা যাবে না।
আরো পড়ুন:- তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত, মোনাজাত এবং দোয়া