সমাস কাকে বলে
সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। যেমন:-
মহান যে রাজা= মহারাজ | দেশের সেবা = দেশসেবা |
তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র | মা ও বাবা = মা-বাবা |
সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে।
সমস্ত পদ: সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাসনিষ্পন্ন পদটির নাম সমস্ত পদ।
সমস্যমান পদ: যে যে পদে সমাস হয় তাদের প্রত্যেককে সমস্যমান পদ বলে।
পূর্বপদ: সমাসযুক্ত পদের প্রথম অংশ বা শব্দকে বলা হয় পূর্বপদ।
পরপদ: সমাসযুক্ত পদের পরবর্তী অংশ বা শব্দকে বলা হয় উত্তরপদ বা পরপদ।
সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য: সমস্ত পদকে ভেঙে যে বাক্যাংশ করা হয়, তার নাম সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য।
সমাস কত প্রকার
সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথা:-
(১) দ্বন্দ্ব সমাস | (২) কর্মধারয় সমাস |
(৩) তৎপুরুষ সমাস | (৪) বহুব্রীহি সমাস |
(৫) দ্বিগু সমাস | (৬) অব্যয়ীভাব সমাস |
দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কেও তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেছেন। এদিক থেকে সমাস মূলত চারটি । যথা:- দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, অব্যয়ীভাব।
অপ্রধান সমাস
প্রাদি সমাস, অলুক সমাস, নিত্য সমাস ইত্যাদি অপ্রধান সমাস।
দ্বন্দ্ব সমাস
যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
ব্যাসবাক্যের মধ্যে আর, ও, এবং, এই তিনটি অব্যয় থাকে। যথা:-
রাজা ও বাদশা = রাজাবাদশা | মা ও বাবা = মা-বাবা |
নয় ও ছয় = নয়ছয় | দোয়াত ও কলম = দোয়াত-কলম। |
এখানে রাজা ও বাদশা এবং মা ও বাবা, প্রতিটি পদেরই অর্থের প্রাধান্য সমস্ত পদে রক্ষিত হয়েছে।
দ্বন্দ্ব সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়।
সমার্থক শব্দযোগে- | ঘর-দুয়ার, হাট-বাজার, কল-কারখানা, মোল্লা-মৌলভি,ইত্যাদি । |
বিরোধার্থক শব্দযোগে- | অহি-নকুল,দা-কুমড়া, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি। |
মিলনার্থক শব্দযোগে- | মাসি-পিসি, মা-বাপ, জ্বিন-পরি, ইত্যাদি। |
অঙ্গবাচক শব্দযোগে- | নাক-কান, বুক-পিঠ, হাত-পা, নাক-মুখ ইত্যাদি। |
দুটি ক্রিয়া বিশেষণযোগে : | আগে পাছে, ধীরে-সুস্থে, আকারে-ইঙ্গিতে ইত্যাদি। |
দুটি সর্বনামযোগে- | যে-সে, যা-তা, যথা-তথা, এখানে-সেখানে তুমি-আমি, ইত্যাদি। |
বিপরীতার্থক শব্দযোগে- | ছোট-বড়, ছেলে-বুড়ো, আয়-ব্যয়, জমা-খরচ, লাভ-লোকসান ইত্যাদি ৷ |
সংখ্যাবাচক শব্দযোগে- | সাত-সতের, সাত-পাঁচ, নয় ছয়, উনিশ-বিশ ইত্যাদি। |
প্রায় সমার্থক ও সহচর শব্দযোগে- | পোকা-মাকড়, কাপড়-চোপড়, দয়া-মায়া, ধূতি-চাদর ইত্যাদি। |
দুটি ক্রিয়াযোগে- | চলা-ফেরা, দেখা-শোনা, যাওয়া-আসা, দেওয়া-থোওয়া ইত্যাদি। |
দুটি বিশেষণযোগে- | আসল-নকল, ভালো-মন্দ, কম-বেশি, বাকি বকেয়া ইত্যাদি । |
অলুক দ্বন্দ্ব সমাস
যে দ্বন্দ্ব সমাসে কোনো সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ হয় না, তাকে অলুক দ্বন্দ্ব বলে।
হাতে-কলমে | দুধে-ভাতে |
জলে-স্থলে | দেশে-বিদেশে |
কর্মধারয় সমাস
বিশেষণ পদের সাথে বিশেষ্য পদের সমাস হলে কর্মধারয় সমাস। এ সমাসে পরপদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়। এ সমাসে সাধারণত ব্যাস বাক্যের মাঝে যে, যিনি, যে-সে, তিনি প্রভৃতি থাকে।
মহান যে নবী= মহানবী | যিনি জজ তিনি সাহেব= জজ সাহেব |
শান্ত অথচ শিষ্ট = শান্তশিষ্ট | কাঁচা অথচ মিঠা = কাঁচামিঠা |
কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয় ।
দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে।
যিনি জজ তিনিই সাহেব = জজ সাহেব। |
পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষ বাচক হয়।
সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা | মহতী যে কীর্তি = মহাকীর্তি |
পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’ স্থানে ‘কৎ’ হয়।
কু যে অর্থ = কদর্থ | কু যে আচার= কদাচার |
বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষণ পরে আসে, বিশেষ্য আগে যায়।
সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ | অধম যে নর = নরাধম |
দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে বোঝালে।
যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর |
কার্যে পরম্পরা বোঝাতে দুটি কৃতন্ত বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন –
আগে ধোয়া পরে মোছা= ধোয়ামোছা |
বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে, ‘মহৎ ও ‘মহান’ স্থানে ‘মহা’ হয়। যেমন-
মহৎ যে জ্ঞান= মহাজ্ঞান | মহান যে নবি = মহানবি |
বিভিন্ন প্রকারের কর্মধারয় সমাস
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস, উপমান কর্মধারয় সমাস, উপমিত কর্মধারয় সমাস এবং রূপক কর্মধারয় সমাস।
মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথা-
স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ= স্মৃতিসৌধ | সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন |
সাহিত্য বিষয়ক সভা= সাহিত্যসভা |
উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু। প্রত্যক্ষ কোনো বস্তুর সাথে পরোক্ষ কোনো বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় উপমান। এ সামাসে ব্যাস বাক্যের মাঝে সাধারণত ন্যায়, তুল্য, মত, সদৃশ প্রভৃতি থাকে।
ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ = ভ্রমরকৃষ্ণকেশ। |
এখানে ভ্রমর উপমান এবং কেশ উপমেয়। কৃষ্ণত্ব হলো সাধারণ ধর্ম।
সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।যথা –
মিশির ন্যায় কালো = মিশকালো। | |
তুষারের ন্যায় শুভ্র – তুষারশুভ্র | অরুণের ন্যায় রাঙা = অরুণরাঙা |
উপমিত কর্মধারয় সমাস
সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। ব্যাস বাক্যের শেষে সাধারণত ন্যায়, তুল্য, মত, সদৃশ প্রভৃতি থাকে। এ সমাসে উপমেয় পদটি পূর্বে বসে এবং সমাসবদ্ধ পদগুলো বিশেষ্য ।
মুখ চন্দ্রের ন্যায় = চন্দ্রমুখ | পুরুষ সিংহের ন্যায় = সিংহপুরুষ |
কুমারী ফুলের ন্যায়= ফুলকুমারী |
রূপক কর্মধারয় সমাস
ব্যাস বাক্যের মধ্যে ‘রূপ’ শব্দটি থাকলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়। এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে বসে এবং উপমান পদ পরে বসে।
মন রূপ মাঝি= মনমাঝি | বিষাদ রূপ সিন্ধু= বিষাদসিন্ধু |
ক্রোধ রূপ অনল =ক্রোধানল | মন রূপ মাঝি= মনমাঝি |
তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেই প্রকারের বিভক্তির চিহ্ন লোপ পায় সেই প্রকারের তৎপুরুষ সমাস হয়।
বিপদকে আপন্ন= বিপদাপন্ন। | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ লোপ পেয়েছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ ।
রাজারপুত্র= রাজপুত্র। | ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস |
এখানে ‘র’ লোপ পেয়ে সমাস হয়েছে। ‘র’ যেহেতু ৬ষ্ঠী বিভক্তি তাই রাজপুত্র ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।
তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার
দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, যষ্ঠী, সপ্তমী, নঞ, উপপদ ও অলুক তৎপুরুষ সমাস ।
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) ইত্যাদি লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।
দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত | বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন |
ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়।
চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী। |
তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।
মন দিয়ে গড়া = মনগড়া | শ্রম দ্বারা লব্ধ মাখা= মধুমাখা |
উপকরণবাচক বিশেষ্য পদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়।
স্বর্ণ দ্বারা মণ্ডিত স্বর্ণমণ্ডিত | হীরকখচিত, চন্দনচর্চিত ইত্যাদি। |
ঊন, হীন, শূন্য প্রভৃতি শব্দ উত্তরপদ হলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়।
এক দ্বারা ঊন = একোন | বিদ্যা দ্বারা হীন = বিদ্যাহীন |
জ্ঞান দ্বারা শূন্য = জ্ঞানশূন্য | পাঁচ দ্বারা কম = পাঁচ কম |
চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে।
গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি | বসতের নিমিত্ত বাড়ি= বসতবাড়ি |
আরামের জন্য কেদারা= আরামকেদারা | বিয়ের জন্য পাগলা = বিয়েপাগলা ইত্যাদি। |
পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে ইত্যাদি) লোপে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে।
বিলাত থেকে ফেরত = বিলাতফেরত ইত্যাদি। | যথা খাঁচা থেকে ছাড়া = খাঁচাছাড়া |
সাধারণত চ্যুত, আগত, ভীত, গৃহীত, বিরত, মুক্ত, উত্তীর্ণ, পালানো, ভ্রষ্ট ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে যুক্ত হলে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়।
স্কুল থেকে পালানো = স্কুলপালানো | জেল থেকে মুক্ত = জেলমুক্ত |
যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে যষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে।
খেয়ার ঘাট = খেয়াঘাট | রাজার পুত্র = রাজপুত্র |
চায়ের বাগান = চাবাগান | শ্বশুরবাড়ি, বিড়ালছানা ইত্যাদি। |
- ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে ‘রাজা’ স্থলে ‘রাজ’, পিতা, মাতা, ভ্রাতা স্থলে যথাক্রমে ‘পিতৃ’, ‘মাতৃ’, ‘ভ্রাতৃ’ হয় ।
রাজার পুত্র মাতৃসেবা, পুত্রের বধূ=পুত্রবধূ, ভ্রাতার স্নেহ = ভ্রাতৃস্নেহ ইত্যাদি।
- শিশু, দুগ্ধ ইত্যাদি শব্দ পরে থাকলে স্ত্রীবাচক পূর্বপদ পুরুষবাচক হয়।
মৃগীর শিশু = মৃগশিশু | ছাগীর দুগ্ধ = ছাগদুগ্ধ। |
- পরপদে রাজি, গ্রাম, বৃন্দ, গণ, যূথ প্রভৃতি সমষ্টিবাচক শব্দ থাকলে যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়।
ছাত্রের বৃন্দ =ছাত্রবৃন্দ | হস্তীর যূথ = হস্তীযূথ |
- অর্ধ শব্দ পরপদ হলে সমস্তপদে তা পূর্বপদ হয়। যেমন – দিনের অর্ধ=অর্ধদিন ।
- কালের কোনো অংশবোধক শব্দ পরে থাকলে তা পূর্বে বসে। যথা— অহ্নের (দিনের) পূর্বভাগ = পূর্বাহ্ণ।
- ব্যাসবাক্যে ‘রাজা’ শব্দ পরে থাকলে সমস্তপদে তা আগে আসে। যেমন-
পথের রাজা = রাজপথ | হাঁসের রাজা = রাজহাঁস। |
অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
ঘোড়ার ডিম, মামার বাড়ি, সাপের পা, মাটির মানুষ, হাতের পাঁচ, মনের মানুষ, কলের গান ইত্যাদি। কিন্তু, ভ্রাতার পুত্র = ভ্রাতুষ্পুত্র (নিপাতনে সিদ্ধ)।
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে ) লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে।
গাছে পাকা = গাছপাকা | দিবায় নিদ্রা = দিবানিদ্রা |
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে কোনো কোনো সময় ব্যাসবাক্যে পরপদ সমস্তপদের পূর্বে আসে।
পূর্বে অদৃষ্ট অদৃষ্টপূর্ব | পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব |
পূর্বে অশ্ৰুত = অশ্রুতপূর্ব |
নঞ তৎপুরুষ সমাস
না বাচক নঞ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়) পূর্বে বসে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে।
ন আচার = অনাচার, | অনাদর |
ন কাতর = অকাতর | নাতিদীর্ঘ, নাতিখর্ব, অভাব, বেতাল ইত্যাদি। |
উপপদ তৎপুরুষ সমাস
যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎ-প্রত্যয় যুক্ত হয় সে পদকে উপপদ বলে। কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয়, তাকে বলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস।
জল দেয় যে = জলদ | পঙ্কে জন্মে যা = পঙ্কজ। |
গলাকাটা, পা-চাটা, পাড়াবেড়ানি, ছা-পোষা ইত্যাদি । | বর্ণচোরা, ছেলেধরা, ধামাধরা, পকেটমার, ছারপোকা, ঘরপোড়া |
অলুক তৎপুরুষ সমাস
যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লোপ হয় না, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে।
গায়ে পড়া = গায়েপড়া | কলে ছাঁটা, গরুর গাড়ি, কলের গান ইত্যাদি। |
বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোনো পদকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। এ সমাসে ব্যাস বাক্যের শেষে সাধারণত যে বা যার থাকে।
দশ আনন (মাথা) আছে যার= দশানন | হস্ত আছে যার= হস্তী |
মহান আত্মা যার = মহাত্মা | স্বচ্ছ সলিল যার = স্বচ্ছসলিলা |
বহুব্রীহি সমাসে ‘সমান’ শব্দের স্থানে ‘স’ এবং ‘সহ হয়।
সমান কর্মী যে = সহকর্মী | সমান উদর যাদের = সহোদর |
বহুব্রীহি সমাসে পরপদে মাতৃ, পত্নী, পুত্র, স্ত্রী ইত্যাদি শব্দ থাকলে এ শব্দগুলোর সঙ্গে ‘ক’ যুক্ত হয়।
নদী মাতা (মাতৃ) যার = নদীমাতৃক | বি (বিগত) হয়েছে পত্নী যার = বিপত্নীক |
বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘চূড়া’ শব্দ সমস্ত পদে ‘চূড়’ এবং ‘কর্ম’ শব্দ সমস্ত পদে ‘কর্মা’ হয়।
চন্দ্ৰ চূড়া যার = চন্দ্রচূড় | বিচিত্র কর্ম যার = বিচিত্রকর্মা |
বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘গন্ধ’ শব্দ স্থানে ‘গন্ধি’ বা ‘গন্ধা’ হয়।
মৎস্যের ন্যায় গন্ধ যার মৎস্যগন্ধা | সুগন্ধ যার = সুগন্ধি |
বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ
বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার । যথা:- সমানাধিকরণ, ব্যাধিকরণ, ব্যতিহার, নঞ, মধ্যপদলোপী, প্রত্যয়ান্ত, অলুক ও সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি।
অলুক বহুব্রীহি
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে।
গলায় গামছা যার= গলায়গামছা | হাতে ছড়ি, কানে কলম |
মাথায় পাগড়ি যার = মাথায়পাগড়ি | গায়ে-পড়া, মুখে–ভাত ইত্যাদি। |
নঞ বহুব্রীহি
বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ (না অর্থবোধক) অব্যয় যোগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ বহুব্রীহি বলে । নঞ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয়। যেমন :
ন (নাই) জ্ঞান যার = অজ্ঞান | না (নাই) চারা (উপায়) যার = নাচার |
বে (নাই) হেড যার = বেহেড | নি (নাই) ভুল যার = নির্ভুল |
সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়।
হত হয়েছে শ্রী যার হতশ্রী | খোশ মেজাজ যার = খোশমেজাজ। |
উচ্চশির, হৃতসর্বস্ব | নীলকণ্ঠ, জবরদস্তি, ইত্যাদি। |
ব্যতিহার বহুব্রীহি
ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। এ সমাসে পূর্বপদে ‘আ এবং উত্তরপদে ‘ই’ যুক্ত হয়। যথা :
হাতে হাতে যে যুদ্ধ = হাতাহাতি | চুলাচুলি, কাড়াকাড়ি |
গালাগালি, কোলাকুলি, লাঠালাঠি ইত্যাদি। | কানে কানে যে কথা = কানাকানি। |
ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি
বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয়, তবে তাকে বলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি। যথা :
কথা সর্বস্ব যার = কথাসর্বস্ব | আশীতে (দাঁতে) বিষ যার = আশীবিষ |
পাতা-চাটা, পাতাছেঁড়া | ছা-পোষা, পা-চাটা |
মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনো অংশ যদি সমস্তপদে লোপ পায়, তবে তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে। যেমন :
হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি | বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর = বিড়ালচোখী |
গায়ে হলুদ | মেনিমুখো ইত্যদি। |
সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি
পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বোঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়। এ সমাসে সমস্তপদে ‘আ’, ‘ই’ বা ‘ঈ’ যুক্ত হয়।
দশ গজ পরিমাণ যার দশগজি, চৌ (চার) চাল যে ঘরের = চৌচালা । | চারহাতি, তেপায়া ইত্যাদি |
প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি । যথা—
ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখো (মুখ+ও) | এক দিকে চোখ (দৃষ্টি) যার = একচোখা (চোখ+আ) |
নিঃ (নেই) খরচ যার নি—খরচে (খরচ+এ) | একগুঁয়ে, ঊনপাঁজুরে অকেজো ইত্যাদি। |
নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাস
দু দিকে অপ যার = দ্বীপ | জীবিত থেকেও যে মৃত = জীবনৃত |
অন্তর্গত অপ যার = অন্তরীপ | পণ্ডিত হয়েও যে মূর্খ = পণ্ডিতমূর্খ ইত্যাদি |
দ্বিগু সমাস
ব্যাসবাক্যের প্রথমে সংখ্যা বাচক শব্দ থাকলে এবং সমাহার বা মিলন বুঝালে দ্বিগু সমাস।
শত অব্দের সমাহার= শতাব্দী | তিন মাথার সমাহার = তেমাথা, |
তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল | চার রাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা |
ত্রি (তিন) পদের সমাহার-ত্রিপদী | পঞ্চবটের সমাহার— পঞ্চবটী |
অব্যয়ীভাব সমাস
পূর্বপদে অব্যয়যোগে নিষ্পন্ন সমাসে যদি অব্যয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তবে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।
কণ্ঠের সমীপে= উপকণ্ঠ | মরণ পর্যন্ত= আমরণ |
আমিষের অভাব- নিরামিষ | দিন দিন = প্রতিদিন |
সামীপ্য, বিপ্সা , পর্যন্ত, অভাব, অনতিক্রম্যতা, সাদৃশ্য, যোগ্যতা প্রভৃতি নানা অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়। নিচের উদাহরণগুলোতে দেখানো হয়েছে-
বিসা (অনু, প্রতি)- | ক্ষণে ক্ষণে = প্রতিক্ষণে, দিন দিন = প্রতি দিন, ক্ষণ ক্ষণ = অনুক্ষণ। |
প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থে (প্রতি) : | প্রতিপক্ষ, প্রত্যুত্তর। |
দূরবর্তী অর্থে (প্র, পর) : | অক্ষির অগোচরে = পরোক্ষ। |
ক্ষুদ্র অর্থে (উপ)-: | উপগ্রহ, উপনদী। |
পশ্চাৎ (অনু)- | পশ্চাৎ গমন = অনুগমন, পশ্চাৎ ধাবন = অনুধাবন । |
অতিক্রান্ত (উৎ)-: | শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত = উচ্ছৃঙ্খল। বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল, |
সাদৃশ্য (উপ)- | শহরের সদৃশ = বনের সদৃশ উপবন, উপশহর, গ্রহের তুল্য = উপগ্রহ, । |
অভাব (নিঃ = নির)- | ভাবনার অভাব = নির্ভাবনা, জলের অভাব=নির্জল, আমিষের অভাব = নিরামিষ উৎসাহের অভাব = নিরুৎসাহ। |
সামীপ্য (উপ)- | কণ্ঠের সমীপে = কূলের সমীপে = উপকূল, উপকণ্ঠ, |
পর্যন্ত (আ) | -সমুদ্র থেকে হিমাচল পর্যন্ত = আসমুদ্রহিমাচল, |
অনতিক্রম্যতা (যথা) | -রীতিকে অতিক্রম না করে = যথারীতি, সাধ্যকে অতিক্রম না করে যথাসাধ্য। |
বিরোধ (প্রতি) | -বিরুদ্ধ বাদ = বিরুদ্ধ কূল = প্রতিকূল, প্রতিবাদ |
ঈষৎ (আ) | ঈষৎ রক্তিম = আরক্তি, ঈষৎ নত = আনত, |
পূর্ণ বা সমগ্র অর্থে | -পরিপূর্ণ, সম্পূর্ণ |
প্রতিনিধি অর্থে | প্রতিচ্ছায়া, প্রতিচ্ছবি |
প্রাদি, নিত্য, উপপদ ও অলুক সমাস সম্বন্ধে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
প্রাদি সমাস
প্র, পরি, প্রতি, অনু প্রভৃতি উপসর্গ পূর্ব পদে থাকলে সাধারণত প্রাদি সমাস হয়। যথা-
অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ =অনুতাপ | প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) গতি = প্রগতি |
অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ= অনুতাপ | পরি (চতুর্দিক) যে ভ্রমণ= পরিভ্রমণ |
প্রকৃষ্ট ভাব= প্রভাব | প্র (প্রকৃষ্ট ) যে বচন = প্রবচন |
নিত্যসমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে, ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্যসমাস বলে।
তুমি আমি ও সে = আমরা | অন্য গৃহ = গৃহান্তর |
কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র | দুই এবং নব্বই = বিরানব্বই। |
অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর | অন্য দেশ= দেশান্তর, |
আরো পড়ুন:- কারক কাকে বলে এবং কত প্রকার ও কী কী, সন্ধি বিচ্ছেদ বিভিন্ন পরীক্ষায় বার বার আসা