ইফতারের দোয়া বাংলা

ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ

ইফতার কি কেন করবেন

ইফতার হলো রমজান মাসে রোজা রাখার পর সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতারের দোয়া পড়ে খেজুর, পানি বা অন্য কোনো খাবার খেয়ে রোজা ভাঙার নাম। এটি মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং সমাজিক অনুষ্ঠান।

এটি সাধারণত মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে খেজুর ও পানি দিয়ে শুরু করা হয়, যা ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাত। ইফতারের সময় ইফতারের দোয়া এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা হয়।

সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতারের সময় হয়। সময় হওয়া মাত্র ইফতার করা উত্তম। ইফতার করার পূর্বে ইফতারের দোয়া পড়তে হয়। আকাশে মেঘ থাকলে কিছু বিলম্বে ইফতার করতে হয়। সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হলে বিলম্ব করা মাকরূহ

তবে বর্তমান সময়ে যেহেতু সবার কাছে ঘড়ি থাকে এবং পূর্ব থেকে সবার জানা থাকে যে আজকে ইফতার কখন। তাহলে সে সময় অনুযায়ি ইফতার করে নিতে পারবে।

ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ-১

ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ

দোয়ার আরবি না পড়ে বাংলা উচ্চারণ দেখে পড়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সর্তকতা মেনে চলা উচিত, যাতে দোয়া সঠিকভাবে এবং তার প্রকৃত অর্থে করা হয়। আরবি ভাষায় অনেক শব্দের উচ্চারণ নির্দিষ্ট নিয়মে হতে হয়। বাংলা উচ্চারণ অনুসরণ করলে শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হতে পারে।

তাই, যদি সম্ভব হয়, আরবি উচ্চারণ সঠিকভাবে শেখা এবং তা অনুসরণ করা উচিত।যদি আরবি উচ্চারণ শিখতে সক্ষম না হন, তাহলে বাংলা উচ্চারণ ব্যবহার করতে পারেন কেবলমাত্র সহায়তার জন্য, তবে দোয়া পাঠের আগে, সঠিক আরবি উচ্চারণ ও শব্দের মানে বোঝার চেষ্টা করুন।

ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ সহ

আরো পড়ুন:- রোজার নিয়ত বাংলা এবং আরবি

কেউ মনে করছে যে, সূর্য অস্ত গেছে এবং সে ইফতার করেছে, কিন্তু পরক্ষণে সে জানাতে পারলো, সূর্য অস্ত হয়নি। তার ঐ রোযা ভঙ্গ হয়েছে, সুতরাং কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। শুকনা খেজুর বা খোরমা দিয়ে ইফতার করা উত্তম। তা না পেলে অন্য কোন মিষ্টান্ন বা ফল দ্বারা ইফতার করা ভাল ।

ইফতারের পর বা ইফতার করাকালীন সময় দোয়া

হযরত মোহাম্মদ (স.) ইফতার করার সময় নিচের দোয়াটি পড়তেন-

ইফতার দোয়া-৩

ইফতারের সময় করণীয়

ইফতারের সময় বেশি বেশি ক্ষমা ও দোয়া প্রার্থনা করা।ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা।
ইফতারের সময় অন্য কাজে ব্যস্ত না থাকা।খেজুর, সাদা পানি অথবা দুধ দিয়ে ইফতার করে মাগরিবের নামাজ জামাতে পড়া।

ইফতারের ফজিলত

ইফতার একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক সময়, যা আমাদের আল্লাহর কাছে নিকটবর্তী করে এবং সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধের সেতুবন্ধন তৈরি করে। কুরআন ও হাদিসে ইফতারের ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বর্ণিত হয়েছে। নিচে ইফতারের তাৎপর্য এবং ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়। এরপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত।”

রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে: এক. ইফতারের সময়, দুই. আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।”

হযরত মুহাম্মদ (সা.) আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হবে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে—অথচ রোজাদারের সওয়াব কমবে না।” —

আরো পড়ুন: রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ

ইফতারের আরো কিছু ফজিলত নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

  • হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন- “রোজা ও কুরআন কিয়ামত দিবসে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে… রোজা বলবে: ‘হে রব! আমি তাকে দিনের সময় পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছি, আমার কারণে তার জন্য সুপারিশ কবুল করুন।'” — (মুসনাদে আহমাদ)
  • রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সম্ভাবনাময়। ইফতার আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত লাভের একটি সুযোগ সৃষ্টি করে।
  • ইফতার সামাজিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। পরিবার, বন্ধু, প্রতিবেশী বা গরীব-দুঃখী মানুষের সাথে ইফতার করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা, যা সমাজে ঐক্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করে।
  • ইফতার পার্টি বা মসজিদে সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের প্রতি দয়ার বহিঃপ্রকাশ। এটি সাদাকাহ ও দানশীলতার প্রতিফলন।
  • সারাদিন উপবাসের পর ইফতার করা একটি আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ। এটি আমাদের ধৈর্য ও সংযমের শিক্ষা দেয়, যা একজন মুমিনের চরিত্র গঠনে সহায়ক।
  • ইফতার আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম। এটি আমাদের তাঁর কাছে আরও নিকট পৌঁছানোর সুযোগ প্রদান করে।
  • সারাদিনের উপবাসের পর ইফতার শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং শক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
  • ইফতারের সময় আল্লাহর জিকির ও দোয়া মানসিক চাপ কমাতে এবং আত্মিক শান্তি প্রদান করতে সহায়ক।

ইফতার শুধু একটি খাদ্য গ্রহণের সময় নয়; এটি আল্লাহর আনুগত্য, সামাজিক দায়িত্ব এবং আত্মশুদ্ধির একটি পূর্ণাঙ্গ ইবাদত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইফতারের প্রকৃত ফজিলত বুঝে সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন।

আরো পড়ুন:- তারাবির নামাজের নিয়ত, মোনাজাত এবং দোয়া

রোজার অবশ্যকীয় মাসআলা

  • মুখের থুথু গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হয় না, থুথুর পরিমাণ যতই হউক না থুথুর চেয়ে রক্ত কম হয় এবং যিহবায় রক্ত অনুভব না করে তবে তার দ্বারা রোযা নষ্ট হয়ে
  • মুখের ভিতর হতে রক্ত বের হলে থুথুর সাথে মিশ্রিত হয়ে যদি থুথুর পরিমাণ হতে রক্ত অনুভূত হয় এবং তা খেয়ে ফেলে তবে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
  • বিড়ি, সিগারেট ও হুক্কা পান করলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়। আগরবাতি ও ধুপ জ্বালিয়ে রোযাদার নিজে ঘ্রাণ নিলে রোযা নষ্ট হয় কিন্তু আগর, গোলাপের খুশবু গ্রহণ করলে রোযা নষ্ট হবে না।
  • রোযার দিনে স্ত্রীলোক হায়েয হতে পাক হলে দিনের বাকী সময় কিছু পানাহার করবে না । কিন্তু ঐ দিন রোযাদার হিসাবে গণ্য হবে না ।
  • শেষ রোযার দিন সূর্যাস্তের পূর্বে ঈদের চাঁদ দেখা গেলেও দিনের বাকী সময় কছু খাওয়া দুরস্ত হবে না।
  • রোযার মাসে ফরয গোসল রাত্রেই করতে হবে। দিনে করলে রোযার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • স্ত্রীলোকের রোযার মাসে অল্প রাত্রি থাকতে স্রাবের রক্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু গোসল করা বা সেহরী খাওয়ার সময় নেই তবু তাকে রোযার নিয়্যত করে রোযা রাখতে হবে এবং এর পর গোসল করবে।
  • রোযাদার কোন খাদ্য বস্তু কিংবা ঔষধ সেবন করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং ঐ রোযার ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব।
  • রোযা অবস্থায় দিনে স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।
  • রাত্রিকালে সাহরী খাওয়ার পরে মুখে পান ভরিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে এবং ঐ অবস্থায় ভোর হয়ে গেলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং ক্বাযা করতে হবে। কাফফারা দিতে হবে না।

কুরআন ও হাদিসে ইফতারের অসীম ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, যা আমাদের হৃদয়ে রহমত, শান্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথ খুলে দেয়। ইফতারের মাধ্যমে আমরা শুধু শরীরিকভাবে শক্তি অর্জন করি না, বরং আত্মিকভাবে সুস্থ ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠি।

আরো পড়ুন:- আজকের সেহরি ও ইফতারের সময়

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *