প্রেমের কবিতা প্রেমের গভীর অনুভূতি, হৃদয়ের স্পন্দন এবং ভালোবাসার বিভিন্ন রূপ ও রঙকে তুলে ধরে। প্রেমের কবিতা কেবল রোমান্টিক ভালোবাসার কথা বলে না, এতে থাকতে পারে বিষাদের সুর, অপেক্ষার ব্যাকুলতা, আনন্দের উচ্ছ্বাস কিংবা অমর ভালোবাসার গল্প।
প্রেমের কবিতা চিরন্তন, কারণ প্রেম মানবজীবনের একটি প্রাথমিক এবং গভীরতম অনুভূতি। এটি দুই হৃদয়ের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যে অনুভূতি কখনো সরল, কখনো জটিল। এ ধরনের কবিতা হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত হয় এবং পাঠকের মনেও ভালোবাসার এক গভীর অনুভূতির ঢেউ তোলে। প্রেমের কবিতা তাই চিরকালীন ও সার্বজনীন।
আরো পড়ুন: জ্ঞান মূলক কথা
বিখ্যাত প্রেমের কবিতা
বিখ্যাত প্রেমের কবিতা এমন সাহিত্যকর্ম যা প্রেমের গভীর অনুভূতি, মানবিক আবেগ, এবং রোমান্সের সৌন্দর্য তুলে ধরে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কবি তাঁদের অনন্য সৃষ্টির মাধ্যমে প্রেমকে উচ্চস্থানে তুলে ধরেছেন। এখানে কিছু বিখ্যাত প্রেমের কবিতা উল্লেখ করা হলো।
আকাশলীনা
জীবনানন্দ দাশ
সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে – আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।কী কথা তাহার সাথে? – তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ :
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।সুরঞ্জনা, তোমার হৃদয় আজ ঘাস :
বাতাসের ওপারে বাতাস –
আকাশের ওপারে আকাশ।
আকাশ সিরিজ
নির্মলেন্দু শুণ
শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
ঐ আনন্দে কেটে যাবে সহস্র জীবন
শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
অহংকারের মুছে যাবে সকল দীনতা।
শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
স্পর্শ সুখে লেখা হবে অজস্র কবিতা।
শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
শুধু একবার পেতে চাই অমৃত আস্বাদ।
শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
অমরত্ব বন্দী হবে হাতের মুঠোয়।
শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,
তারপর হবো ইতিহাস।
উত্তর
শামসুর রাহমান
তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে
বলতেই পারো
‘এই আকাশ আমার’কিন্তু নীল আকাশ কোনো উত্তর দেবেনা।
সন্ধ্যেবেলা ক্যামেলিয়া হাতে নিয়ে বলতেই পারো,
‘ফুল তুই আমার’
তবু ফুল থাকবে নীরব
নিজের সৌরভে আচ্ছন্ন হয়ে।
জ্যোত্স্না লুটিয়ে পড়লে তোমার ঘরে,তোমার বলার অধিকার আছে, ‘এ জ্যোত্স্না আমার’
কিন্তু চাঁদিনী থাকবে নিরুত্তর।মানুষ আমি, আমার চোখে চোখ রেখে
যদি বলো, ‘তুমি একান্ত আমার’, কী করে থাকবো নির্বাক ?
তারায় তারায় রটিয়ে দেবো, ‘আমি তোমার, তুমি আমার’।
অনেক ছিল বলার
কাজী নজরুল ইসলাম
অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে।
পথ ছিল গো চলার, যদি দু’দিন আগে আসতে।
আজকে মহাসাগর-স্রোতে
চলেছি দূর পারের পথে
ঝরা পাতা হারায় যথা সেই আঁধারে ভাসতে।
গহন রাতি ডাকে আমায় এলে তুমি আজকে।
কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে।
আসতে যদি হে অতিথি
ছিল যখন শুকা তিথি
ফুটত চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে।
অনন্ত প্রেম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার,
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার-কত রূপ ধ’রে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতিপুরাতন বিরহমিলন-কথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষেকালের তিমির রজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রবতারকার বেশে।আমরা দু’জনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয় উৎস হতে।আমরা দু’জনে করিয়া খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝেবিরহবিধূর নয়নসলিলে
মিলনমধুর লাজে।
পুরাতন প্রেম নিত্যনতুন সাজে।আজি সেই চিরদিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিলপ্রাণের প্রীতি
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে-
সকল প্রেমের স্মৃতি,
সকল কালের সকল কবির গীতি।
নিঃসঙ্গতা
আবুল হাসান
অতোটুকু চায় নি বালিকা!
অতো শোভা, অতো স্বাধীনতা!
চেয়েছিলো আরো কিছু কম,আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিলো
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতোটুকু চায় নি বালিকা!অতো হৈ রৈ লোক, অতো ভিড়, অতো সমাগম!
চেয়েছিলো আরো কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি,চেয়েছিলো
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী
চিঠি দিও
মহাদেব সাহা
করুণা করেও হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখি প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড় বোনা একখানি চিঠি
চুলের মতন কোন চিহ্ন দিও বিষ্ময় বোঝাতে যদি চাও।
সমুদ্র বোঝাতে চাও, মেঘ চাও, ফুল পাখি, সবুজ পাহাড়
বর্ণনা আলস্য লাগে তোমার চোখের মতো চিহ্ন কিছু দাও।আজোতো অমল আমি চিঠি চাই, পথ চেয়ে আছি
আসবেন অচেনা রাজার লোক
তার হাতে চিঠি দিও, বাড়ি পৌছে দেবে।
এক কোনে শীতের শিশির দিও এক ফোঁটা,
সেন্টের শিশির চেয়ে তৃণমূল থেকে তোলা ঘ্রাণএমন ব্যস্ততা যদি শুদ্ধ করে একটি শব্দই শুধু লিখো, তোমার কুশল!
ওইতো রাজার লোক যায় ক্যাম্বিসের জুতো পায়ে,
কাঁধে ব্যাগ,
হাতে কাগজের একগুচ্ছ সীজন ফ্লাওয়ারকারো কৃষ্ণচূড়া, কারো উদাসীন উইলোর ঝোঁপ,
কারো নিবিড় বকুলএর কিছুই আমার নয়
আমি অকারণ হাওয়ায় চিৎকার তুলে বলি,
আমার কি কোনো কিছু নেই?করুনা করেও হলে চিঠি দিও,
ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি দিও খামেকিছুই লেখার নেই তুব লিখো একটি পাখির শিস
একটি ফুলের ছোটো নাম,
টুকিটাকি হয়তো হারিয়ে গেছে কিছু হয়তো পাওনি খুঁজেসেইসব চুপচাপ কোনো দুপুরবেলার গল্প
খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড়ো একা লাগে,
তাই লিখোকরুণা করেও হলে চিঠি দিও,
মিথ্যা করেও হলে বলো, ভালোবাসি।
যাত্রাভঙ্গ
নির্মলেন্দু গুণ
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই।হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন কর যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি।তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।তখন আমি একটু ছোঁব
হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরণী নায়ে।নায়ের মাঝে বসবো বটে,
না-এর মাঝে শোবো,
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ
দুঃখ দিয়ে ছোঁব।তুই কেমন করে যাবি-
সে
জীবনানন্দ দাশআমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে;
বলেছিলোঃ ‘এ নদীর জল
তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল;সব ক্লান্তি রক্তের থেকে
স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি;
এই নদী তুমি।’
‘এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?’মাছরাঙাদের বললাম;
গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম।
আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি;
জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে
কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে।সময়ের অবিরল শাদা আর কালো
বনানীর বুক থেকে এসেমাছ আর মন আর মাছরাঙাদের ভালোবেসে
ঢের আগে নারী এক – তবু চোখ ঝলসানো আলো
ভালোবেসে ষোলো আনা নাগরিক যদি
না হয়ে বরং হতো ধানসিঁড়ি নদী।— প্রবল উন্মাদনায় লিখছি দুই ছত্র
তোমাকে দেখার ইচ্ছা জাগছে যত্রতত্র।
নিকোটিনের ধোঁয়ায় পুড়ে যাচ্ছে ঠোঁট
তোমাকে দেখার জন্য দু’চোখ উৎসুক।
একি প্রেম নাকি তোমার ফাঁদ
আনন্দের মাঝেও কাঁদছে পূর্ণ চাঁদ।
এত যে প্রবল টান, শুধুই কি দেহ?
তোমার আমার রসায়ন, জানবে কি কেহ?
কত দিবস কত রজনী হয়েছে গত
প্রেম তো ঠিকই আছে পূর্বেকার মত।
ম্লান হয়নি কোথাও একটু হয়নি ফিঁকে
কি দেখো আর চোখে, চেয়ে আমার দিকে।
আমি তো সেই আগের মত যেমন আছে চাঁদ
এত দিনের পরিণয় পারবে কি দিতে বাদ?
জানি আমি, তোমিও, অটুট চির বন্ধন
তবে কেন দূরে, থামাও হৃদের ক্রন্দন।
কেউ কথা রাখেনি
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুনা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এরকম আতরের গন্ধ হবে।
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ
নিয়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা
নীলপদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুনা, এখন তার বুকে শুধুই
মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ
কথা বলেনি।
এই টুকুইতো
চৌধুরী কামরুল আহসান
এইটুকুইতো চেয়েছি, ছোট এক দ্বীপ হতে
বিশাল সাগরের বুকে
অথবা তুমি যদি মিষ্টি করে হাসো
ছোট্র এক তিল হই তোমার চিবুকে।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ কে
গভীর প্রেমের কবিতা
গভীর প্রেম বলতে বোঝায় এমন এক ধরনের প্রেম যা কেবল বাহ্যিক আকর্ষণ বা সাময়িক আবেগের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত হয় এবং চিরস্থায়ী হয়।
এটি মানসিক, আত্মিক এবং কখনো কখনো আধ্যাত্মিক সংযোগের প্রতিফলন। গভীর প্রেমে রয়েছে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, আত্মত্যাগ এবং একে অপরের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
ভালবাসার সরল সংজ্ঞা
ভালবাসা। এইতো তোমারি মাঝে আমার বাঁচা।
ভালোবাসা মানে তোমার মাঝেই বেঁচে থাকা
তোমার মাঝেই নিজেকে পাওয়া
তোমাকে ঘিরেই আমার নতুন জীবন।।
শিশুকাল থেকেই আলতো আলতু কথা বলতে শুরু হয়
তখনই আমরা মা বাবা বলতে শিখি।
তখন থেকেই আমাদের মনে পরিবারের মানুষের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি
ধীরে ধীরে শৈশব কাটিয়ে কৈশোরী পা দেওয়া
তারপরেই অপর একটি মানুষকে বিশ্বাস করতে শেখা
তার হাত ধরেই জীবনকে নতুন করে দেখা,
পরিণত বয়সে জীবনের কত ছবি আমরা একে চলি!
পরিণত বয়স থেকে বার্ধক্যে পা দেওয়া।
প্রিয় মানুষ, প্রিয় কথা, প্রিয় ঘর,সবকিছুই ধীরে ধীরে স্মৃতির খাতায় জমা হয়। ।
সারা জীবন আমরা ভালবাসায় বেঁচে থাকতে চাই
কিন্তু কতজনেরই বা ভালোবাসার আশা বাঁচে
প্রতিনিয়ত এই ভালোবাসার প্রতি আমরা মনোনিবেশ করি ।
প্রেমহীন ভালবাসা
প্রেমহীন ভালবাসা সুখের আশ্বাসে
দীর্ঘ সংগমে রাত্রি জাগরণ শেষে
ক্লান্ত চোখ খুঁজে বেড়ায় আবারও সুখের প্রদীপ
হৃদয়ে প্রেম নেই শুধুই আছে ভালবাসা,
ক্ষণিকের জ্বালা-দ্বীপও।
প্রেম হীন দীর্ঘ রজনি চাই না আমি,
চাই না চোখ ধাঁধানো আলোর ঝিলিক-রশ্নি
স্বচ্ছ স্রোতস্বিনী জলের ন্যায় অবগাহনের জল চাই,
হোক নিভু নিভু ছোট্ট প্রেমের প্রদীপ
হোক না কয়েক পলক, হোক কিছু সময়
তবুও প্রেম থাকুক আমাদের মাঝে বেঁচে
গা-ছুঁয়ে যাওয়া ছোট্ট প্রহর,
দিবা-নিশি জেগে রই তোমারি মাঝে।।
ভালোবাসার স্মৃতি
তোমার চোখে চোখ মিলিয়ে
নির্ভেজাল স্বপ্ন আঁকি
দুঃস্বপ্নে না উঁকি দিলে আজ
খেয়াল তাদের দিকে রেখো|
আপনেরা হয় স্বার্থপর
ঘুমও কেড়ে নেয়
আপন পর দুচোখে হাজারো স্মৃতি
স্বপ্নেরা তাই আজ বিস্তৃতি।
আলতো উষ্ণ ছোঁয়া
আমার দেওয়া ফুলে ধুলো যদি লাগে ভুলে
আমার কথা কুসুম ম্লান হবে না কোন কালে…
জীবনের যত অভিমান ভুলায় তুমি,
ছুঁয়ে দিও আমারে তোমার কোমল হাতের ডালে।
তোমার রূপে আমি আপন হয়ে ঘুরেছি বিশ্ব মাঝে।
আজ তোমার রূপে সেজেছি আমি যাইব তোমার লোকে।
ভেদের প্রাচীর মিটায়েছি আজ..
অখিল বিশ্বে দেখি আপনারই রূপ
যেথা আমি সেথায় তুমি,
এক হয়েছি আজ দুজন।
প্রেমিক
সে একদিন গাছ হয়েছিল..
শহরের অশ্রুত শব্দের মত
মস্ত মস্ত কুঠোর এসে তার হাত পা শিকল ভেঙে দিল-
তাই তার সমস্ত নীড় ভেঙে গেল।
সে একদিন পাখি হয়েছিল..
উড়তে উড়তে সে দেখেছিল
তার প্রেমাস্পন্দনের চোখে অন্য কারো ঠোট, ঠোঁটে অন্য কারো গাল-
তারপর তার সব পালক ঝরে পড়ে গেল।
সে একদিন বাঘ হয়েছিল,
মস্ত বড় এক হিংস্র বাঘ।
বহু সন্তর্পণে নজর রাখার শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পরেই..
সে তার চোখে দেখেছিল আতঙ্ক
রোদের কানে কানে ফিসফিসিয়ে কথা
দূরত্ব তোমার আমার মাঝখানে হাজারো
আর নয়ন ভরা অশ্রু।
তাই তার সমস্ত থাবার নখ এখন খসে গেছে।
প্রিয়জনের জন্য তার হৃদয় হয়েছে এখন ক্ষতবিক্ষত
যে হৃদয়ে রয়েছে এখন কান্না ভরা হিংস্রতা।
শুধু তোমার জন্যে
চুলে লেগেছিল কয়েকটা বৃষ্টির ফোঁটা
সেদিন তোমার নাম রেখেছি গোলাপ
হারা ভারতবর্ষ হলো শান্তির নীড়
ঘর হয়ে উঠল অরণ্য বিভুই।
রোদের কানে কানে ফিসফিসিয়ে কথা
দূরত্ব তোমার আমার মাঝখানে হাজারো-
পলকহীন মাছের চোখের মতো..
স্বচ্ছ জল তুমি আর আমি স্পষ্ট সেদিকে তাকিয়ে।
অপেক্ষা একটা ভোরের
কাঠবিড়ালির ঠোঁটে ভর করে প্রতিদিন র্সুয ওঠে
চাতকের ছোট্ট ডানায় পাখা মেলে সজল বরষা আসে,
ভিজিয়ে দিয়ে যায় হৃদয়ের সব অলিন্দ।
চির নতুন, চির তরুন হয়ে বেঁচে থাকে
”সুন্দর” যা কিছু চিরন্তন।
অনিমেষ অপেক্ষায় থাকি।
স্মৃতির পাতায় খুঁজে নেওয়া প্রিয় মুখ, চেনা কণ্ঠস্বর
প্রিয় কিছু শব্দ যা চিরন্তন নতুন।
শুধু অপেক্ষা একটা ভোরের
ঘাসের বুকে জমে থাকা ছোট্ট অমলিন শিশির বিন্দু
যেন এক একটা সাত রঙা নিষ্পাপ পৃথিবী,
দরজায় কড়া নেড়ে জানান আমাকে ,
এই তো তোমার পৃথিবী, সব দিলাম। এবার দুঃখ কষ্ট সব ভুলে যাও তুমি প্রিয়
আবেগি প্রেমের কবিতা
আবেগি প্রেমের কবিতা বলতে বোঝায় এমন এক ধরনের কবিতা, যেখানে প্রেমের অনুভূতি গভীর আবেগের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। এটি হৃদয়ের অন্তর্গত স্পন্দন, ব্যাকুলতা এবং ভালোবাসার তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরে।
তুমি আমার প্রেমের খাতা
ভালোবাসার কবিতা লেখার কলম,
পাশাপাশি থেকে দুটি হাত ধরে
ভালোবাসবো তোমায় জনম জনম।।
তুমি আমার আষাঢ়-শ্রাবণ
মেঘলা দিনের রিমিঝিমি বৃষ্টি
আমার জন্যই বিধাতা তোমায়
করেছে অপূর্ব রূপের সৃষ্টি।।
তুমি আমার মনের রানী
আমার সাজানো রঙ্গিন আশা,
বুকের মাঝে জমিয়ে রেখেছি
তোমার দেওয়া মধুর ভালোবাসা।
রোমান্টিক প্রেমের কবিতা
রোমান্টিক প্রেমের কবিতা বলতে বোঝায় এমন কবিতা যা প্রেমের সৌন্দর্য, কোমলতা, এবং গভীর আবেগকে তুলে ধরে। রোমান্টিক কবিতায় আবেগের গভীরতা, রূপের বর্ণনা এবং একধরনের মিষ্টি কল্পনা ফুটে ওঠে। এ ধরণের কবিতায় ভালোবাসার আত্মিক এবং কখনো কখনো শারীরিক আকর্ষণকেও সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ করা হয়।
মিষ্টি প্রেম
প্রখর রোদে ঘামছি আমি
ভাবছি এ যে বৃষ্টি,
মন্দের মাঝেও ভালো থাকি
পেলে তোমার দৃষ্টি।
তোমায় ছাড়া শূন্য ভূবন
মহাকাশের মতো,
নেই পাশেও তবু তোমায়
ভাবছি অবিরত।
বিবাহত্তোর প্রেম
আমি যদি ডাইনে চলি
তুমি চলো বামে,
শীতে যখন কাঁপছি আমি
তুমি ভেজো ঘামে।
তোমার সঙ্গে এখন আমার
কিছুই মিলে না,
কিন্তু তোমায় ছাড়া আমি
চলতে পারিনা ।
মিনি প্রেম
দূর পাল্লার বাসে তুমি
ছিলে সহযাত্রী,
মিষ্টি মিষ্টি হরেক কথায়
কাটলো দিবা রাত্রি।
নামতে গিয়ে নাম্বার দিলে
তোমার সেল ফোনের,
ডায়াল করে টাশকি খেলাম
নাম্বার অন্য জনের।
মিচুয়াল প্রেম
আমায় তুমি ভালোবাসো
আমিও কি কম ?
সমান্তরাল ভালোবাসা
চলছে হরদম।
ছাড় দিইনা কেউ কাউকেই
পান থেকে চুন খসলেই,
ভালোবাসার বারুদ জ্বলে
হৃদয় একটু ঘষলেই।
অফিস প্রেম
রিসিপশানের সেই মেয়েটির
বাঁকা চোখের খাদে,
আটকে গেলো হৃদয় আমার
পড়ে প্রেমের ফাঁদে।
তাকে দেখলেই বিষম খাই
মাথা নত লাজে,
বসের জ্বালায় হয়না প্রেম
মন বসেনা কাজে।
পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা
পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা বলতে বোঝায় এমন সব কবিতা, যা ভালোবাসার গভীর অনুভূতি, মানবিক সম্পর্কের সৌন্দর্য এবং প্রেমের শাশ্বত দিককে তুলে ধরে। এই কবিতাগুলো মানব হৃদয়ের গভীর আবেগ, চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা, এবং প্রেমের মিষ্টি ও তিক্ত মুহূর্তগুলোর প্রতিচ্ছবি।
মায়ার বন্ধন
জীবনে যদি মরে কাছে ডাকিতে নাহি পারো
মরনে আমারে তুমি তোমার করিয়া নিও
যতদিন আছি আমি তোমারি হয়ে আছি
বোঝো না তাও, তুমি আমার কত প্রিয়।
হৃদয়ে দিয়েছিস স্থান তোমারি চিরতরে
দিলে না তুমি ওগো তারে যে কোন মান
অসহায় হয়ে আমি আছি, তব মুখ চেয়ে
পারো যদি ভালবেসে দিও ওগো তার দাম|
হঠাৎ যদি আমি হারিয়ে যাই চিরতরে,
ভাঙ্গে যদি ভুল তব বেদনার সুর ধরে-
ডাকিও আমারে তুমি তব মুখে নাম লয়ে-
সার্থক হবে নাম তোমার মুখে প্রিয়।
অশ্রু আসে যদি তোমার আঁখিতে ওগো কখনো,
ঝরিও আচ্ছাঅঝোরে তুমি আমার স্মৃতি লাগে-
থাকিবো না হয়তো আমি সেদিন তোমার কাছে
বোঝো না তাও ,তুমি আমার কত প্রিয়।
স্বপ্নভঙ্গ
স্বপ্ন যত চোখের পাতায়
হৃদয় বাজে প্রেমের সুর
দীর্ঘ রাত্রি তোমার ছোঁয়ায়
মলিন সুধার অমৃতের রূপ|
ঝরাপাতা আর হাতটা তোমার
কাজল চোখে লাগে অপরূপ
স্বপ্ন ভাঙার শেষে দেখি
তুমি কাছে নাই আর আমি চুপ|
কৈশোরের ভালোবাসা
জীবনের মধ্যাহ্নে এসে যখন ভাবি বসে একা
স্মৃতির অতলান্ত হতে ভেসে আসে পুরনো দিনের কথা।
কত শত শৈশবের স্মৃতি নিয়ে কাটানো মধুর বেলা
হারিয়ে গেছে কত আজ সময় স্রোতে
বর্তমান হয়ে গেছে যা অতীতের হাতে
হৃদয় বিদ্ধ হয় শৈশবের পুরনো স্মৃতির তীরে
ইচ্ছে করে যেতে আবার শৈশবের পথে ফিরে|
এ ফেরা হবেনা অনন্তকাল
তবুও মনের মাঝে রয়ে যাবে এই ফেরার বাসনা চিরকাল।
হারানো ভালোবাসা
কিছু কিছু কথা যা চিরদিন নীরবে রয়ে যায়
কিছু কিছু ব্যথা যা কখনো হার মানিতে না চায়
কিছু কিছু স্মৃতি যা সদাই ভুলে যেতে চাই
কিছু কিছু কথা যা কুম্ভ মনে নাহি পরাজয়|
তাও চলেছি পথেই জীবনে জানি নেই আলো
বলিতে পারিনা মুখে তবু যাই থাক ভালো
জীবনের স্রোতে যে মায়া ছাড়িলে সাথে
তারই মাঝে মিশে আছি আমি
যদি অন্তর দিয়ে কভু দেখো
যে প্রদীপ নিভে গেছে আঁধারে
আগুনে না ভালোবাসা দিয়ে তা জ্বালো।
গোপনে ভালোবাসা
আমার দেওয়া ফুলে ধুলো যদি লাগে ভুলে
আমার কথার কুসুম ম্লান হবে না কোনো কালে,
জীবনের যত অভিমান ভুলায়ে তুমি-
ছুঁয়ে দিও আমারে তোমার কোমল হাতের ডালে|
তোমাকে না দেখে আমি তোমার ছবি আঁকতে পারি,
তোমার সাথে না দেখা করে আমি তোমার ব্যথা অনুভব করতে পারি,
আমি তোমায় এতটাই ভালবাসি যে!
তোমার মন খারাপে আমি আমার চোখে জল দেখাতে পারি
স্নেহের পরশ
যখন ভালোবাসা বহু পথ ঘুরে
চলে যায় দূর হতে দূরে
বন্ধুর দরজাতে যত কিছু করাঘাত
যায় বিফলে,
কে যেন হঠাৎ বলে
আয় কোলে আয়,,
আমি তো আছি, ভুলিনি তা কি
মা গো, সে কি তুমি?
চোখের ভাষা
এত কথা কি গো কহিতে জানে
চঞ্চল ওই আঁখি-
নিরব ভাষায় কি যে কয়ে যায়
ও সে মনের বনের পাখি|
বুঝতে পারি না ঐ আঁখির ভাষা !
জলে ডুবে তবু মেটে না পিপাসা,
আদর সোহাগ প্রেম ভালোবাসা
অভিমানে মাখামাখি|
মুদিত কমলে ভ্রমরের প্রায়
বন্দী হইয়া কাঁদিয়া বেড়ায়।
চাহিয়া চাইয়া মিনতি জানায়-
সুনীল আকাশে ডাকি
অপেক্ষা
জানিনা তোমায় পাবো কিনা প্রিয় আমি
আমার এ জীবনে হয়তো আর
ভাগ্যে আমার কোনদিনই ছিলে না তুমি
তবু কেন দেখা কুহেলির মত
ক্ষণিকের দেখা দিয়ে কেন মোরে বাঁধিলে তুমি আমায় প্রনয়ের ডোরে,
আশায় তোমার আজও আছি একা-
যদি আসো ফিরে এ অভাগীর নীড়ে।
প্রথম প্রেমের কবিতা
প্রথম প্রেমের সময়, হৃদয়ে এক ধরনের অদ্ভুত কম্পন থাকে। তুমি যখন তাকে দেখো, মনে হয় সময় থেমে গেছে। চোখে চোখ পড়লেই যেন পৃথিবী বদলে যায়। হৃদয়ে তীব্র অনুভূতির ঝড় ওঠে, কিন্তু তুমি তখনই ঠিক বুঝতে পারো না কী ঘটছে।
প্রথম প্রেমে শব্দগুলোও নতুন মনে হয়। কিছু এমন সব মিষ্টি কথা যা কখনো বলোনি, কিন্তু যেন ভাষা খুঁজে পেয়ে যায়। প্রতিটি মুহূর্ত এক নতুন অনুভূতির হাতছানি দেয়, আর তোমার মন যেন একটু একটু করে দুলে ওঠে। কখনো মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি তুমি এখন অনুভব করছো।
(১)
আমি তো জানতাম, তুমি আমার কখনো হবে না আর,
তবু ও এক অদৃশ্য টান কাছে ডাকতো বারংবার।
আমি ও যেতাম ছুট্টে চলে, সকল কার্য ফেলে,
তুমি ও দেখাতে অবহেলা, দিতে তাড়িয়ে হেসে-খেলে।
আমি তো জানতাম, তুমি যে হবে অন্য কারোর প্রিয়া,
সত্য জেনে ও তোমাকে ই কেন মন চাইতো?- বল হিয়া!
যেদিন তোমায় দেখেছিলেম অন্য কারোর সাথে,
তুমি ও ছিলে হাসি-খুশি, হাত রেখেছিলে তার হাতে।
সত্যি বলছি, সেদিনের পর কষ্ট হয়েছে অনেক,
সেই কষ্ট কে বুঝবে বলো?- তবু বুঝিয়েছি প্রতি জনেক।
তোমার পাশের কলঙ্কিত “আমি” টা না হয় মুছে যাক,
তোমায় প্রণয় অন্যের সাথে- অদেখা সত্য হয়ে ই থাক!
(২)
দেখেছিলেম যেদিন তোমায় অঝোর আলোর পরশে,
থাকতে আর পারি নি সেদিন একলা চুপটি বসে।
কী সন্দর সেজেছিলে!- যেন মায়া ভরা সেই মুখ,
ওই বদন এই লুকিয়ে আছে আমার সকল সুখ।
চুপি চুপি পায়ে হাঁটছিলাম তোমার আঁচল ধরে,
কি-বা শঙ্কায় উঠলে মেতে, ফুল গুলো গেল পড়ে।
সেই ফুল তো লাগিয়ে ছিলেম তোমার কানের পিঠে,
সেই ফুল গুলো শুধু ই স্মৃতি, রুপ নিয়েছে হয়তো কীটে।
মিছে কথা আর বলি না আমি, সত্যি বলছি ভারি,
সেই মিথ্যার আঁচড়ে ই তো করেছিলে তুমি আড়ি।
সেই থেকে আর পাই নে খুঁজে তোমায় আমি কোথাও,
কেন আমায় ছেড়ে গেলে ওগো, হয়ে গেলে তুমি উধাও?
ব্যর্থ প্রেমের কবিতা
ব্যর্থ প্রেম হলো এমন এক অনুভূতি যা একসময় ছিল আনন্দদায়ক, কিন্তু পরবর্তীতে হঠাৎ করেই ধ্বংস হয়ে যায় বা অসমাপ্ত থেকে যায়। এটি একটি দুঃখজনক, কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা, যেখানে অনুভূতিগুলোর মধ্যে হতাশা, দুঃখ, শূন্যতা, এবং কখনো কখনো এক ধরনের হীনমন্যতা প্রবাহিত হয়। ব্যর্থ প্রেমের পেছনে থাকে অনুরাগের অভাব, বিশ্বাসের অভাব, কিংবা এমন কিছু যা দুইজন মানুষকে একে অপর থেকে দূরে নিয়ে যায়।
(১)
আমি ছিড়ে ফেলেছি ডায়রীর পাতা
যেখানে লিখা ছিলো হাজারো স্বপ্নের কথা
শুধু ছিড়তে পারিনি আমার মনের খাতা
যেখানে জমা আছে অসংখ্য ব্যাথা।
তুমি হয়তো সুখেই আছো
সবারই মাঝে
কিন্তু আমি তো ভালো নেই
সকাল, সন্ধ্যা- সাজে।
চোখ ধাঁধানো অন্ধকারে
ছাড়ব ছাড়ব করে
ছেড়ে দিয়েছিলে তুমি আমার হাত৷
আমি তোমারও বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী
দীর্ঘ বরষ, মাস৷
(২)
তোমার দেওয়া দুঃখই
আমার জন্য অনেক
আমি তোমায় ফিরিয়ে দিলাম
লাল গোলাপ কয়েক শ- খানেক।
তুমি কি আমাকে এখনো
আগের মতো ভালোবাসো?
তুমিও কি আমার মতো
কান্নায় ভেঙে হাসো?
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো
ফিরে এসো কোন এক বর্ষায়
ভিজব দুজনে দুঃখের জলে
বেঁচে আছি আমি এই আশায়।
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস
নিঃশব্দে কেঁদে যায়
আজ আমি বেঁচে থেকেও
তোমার জন্য মৃতপ্রায়।
(৩)
সামান্য কারণে অভিমান
তারপর একটি সম্পর্কের ছিন্ন
জিতে গিয়েছিল আমাদের ইগো
তাই দুজনার ঠিকানা ভিন্ন।
(৪)
যতবার আলো জ্বালাতে যাই
নিভে যায় বারে বারে
আমার জীবনে তোমার আসন
গভীর অন্ধকারে
(৫)
তুমি এক সমুদ্র সুখ নিয়ে
ঘুমাও প্রতি রাতে
আমি না হয় থাকবো জেগে
দুঃখ নিয়ে সাথে।
ভালোবাসার কবিতা
এ যেন এক অনন্য অনুভূতি
স্পর্শ করে যায় মনের গহরে
চোখ যায় দিগন্ত থেকে দিগন্তে-
ততই মন হয় হন্তদন্ত।
ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়
মাঠের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে-
গাছের দোদুল দুলুনি
দেখে মন হয় দিশেহারা।
প্রেম মলিন হয়
পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা হয়ে।
রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়,
গাছের দুলানি তবুও থামেনা-
হাওয়াতে দোদুল দুলতে থাকে
জোসনার এক ফালি চাঁদের কিরণে।
দূরের ঐ দিঘির জল হয়েছে আশ্ফালন,
চোখের কোনে চিক চিক করে ওঠে
মনের গহরে কোন এক ব্যাথার কারণ।
দুরের ওই স্নিগ্ধ করা আলো।
যেন বুঝিয়ে দিয়ে যায়
খিন হলেই হয় না কখনো
তার ভেতরে থাকা গভীরতা ছোট।
হৃদয়ের ভালোবাসা
অন্তরে আলো জ্বেলে রেখো-দৃষ্টিকে গেছ শুধু আঁধারে তে ঢেকে
নিজেকে প্রশ্ন করে দেখনা, যার নাম তুমি আর লেখ না।
কেন তাকে ধরে আছো হৃদয়ে বিদায়ের পথ কেন ছাড়োনি?
কি তার জবাব দেবে যদি বলি আমি কি হেরেছি?
তুমিও কি একটুও হারোনি-
তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছ আমি দিতে পারিনি|
যে পথে আর কোনদিনও ফেরা হবেনা
সেই পথ ধরে আর হাঁটতে যেও না।
সেখানে পাবে শুধু হৃদয় বিদির্ণ করা ক্ষত
রয়ে যাবে এই ব্যথা চিরত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য রত্ন। তাঁর কবিতায় প্রেমের যে গভীরতা ও মাধুর্য রয়েছে, তা অসংখ্য পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের প্রেমের কবিতা কখনো একেবারে সরল, কখনো জটিল; কখনো আনন্দময়, কখনো বিষাদময়; কিন্তু সবসময়ই এক অমলিন অনুভূতি ও আধ্যাত্মিক গভীরতা প্রকাশ করে।
প্রেমের হাতে ঘরা দেব
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রেমের হাতে ধরা দেব
তাই রয়েছি বসে;
অনেক দেরি হয়ে গেল,
দোষী অনেক দোষে।
বিধিবিধান-বাঁধনডোরে
ধরতে আসে, যাই সে সরে,
তার লাগি যা শাস্তি নেবার
নেব মনের তোষে।
প্রেমের হাতে ধরা দেব
তাই রয়েছি বসে।
লোকে আমায় নিন্দা করে,
নিন্দা সে নয় মিছে,
সকল নিন্দা মাথায় ধরে
রব সবার নীচে।
শেষ হয়ে যে গেল বেলা,
ভাঙল বেচা-কেনার মেলা,
ডাকতে যারা এসেছিল
ফিরল তারা রোষে।
প্রেমের হাতে ধরা দেব
তাই রয়েছি বসে।
কত অজানারে জানাইলে তুমি
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কত অজানারে জানাইলে তুমি,
কত ঘরে দিলে ঠাঁই-
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।
পুরনো আবাস ছেড়ে যাই যবে
মনে ভেবে মরি কী জানি কী হবে,
নূতনের মাঝে তুমি পুরাতন
সে কথা যে ভুলে যাই।
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।
জীবনে মরণে নিখিল ভুবনে
যখনি যেখানে লবে,
চির জনমের পরিচিত ওহে,
তুমিই চিনাবে সবে।
তোমারে জানিলে নাহি কেহ পর,
নাহি কোন মানা, নাহি কোন ডর,
সবারে মিলায়ে তুমি জাগিতেছ-
দেখা যেন সদা পাই।
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।
আমার এ প্রেম নয়তো ভীরু
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার এ প্রেম নয় তো ভীরু,
নয় তো হীনবল –
শুধু কি এ ব্যাকুল হয়ে
ফেলবে অশ্রুজল।
মন্দমধুর সুখে শোভায়
প্রেম কে কেন ঘুমে ডোবায়।
তোমার সাথে জাগতে সে চায়
আনন্দে পাগল।
নাচ’ যখন ভীষণ সাজে
তীব্র তালের আঘাত বাজে,
পালায় ত্রাসে পালায় লাজে
সন্দেহ বিহবল।
সেই প্রচন্ড মনোহরে
প্রেম যেন মোর বরণ করে,
ক্ষুদ্র আশার স্বর্গ তাহার
দিক সে রসাতল।
হঠাৎ দেখা
–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন।।
আগে ওকে বারবার দেখেছি
লাল রঙের শাড়িতে-
দালিম-ফুলের মত রাঙা;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলন-চাঁপার মত চিকন-গৌর মুখখানি ঘিরে।
মনে হল, কাল রঙের একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা:
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।।
হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে:
আলাপ করলেম শুরু-
কেমন আছো, কেমন চলছে সংসার ইত্যাদি।
সে রইল জানালার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
কোনটা বা দিলেই না।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায়-
কেন এ-সব কথা,
এর চেয়ে অনেক ভাল চুপ ক’রে থাকা।।
আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।
মনে হল কম সাহস নয়-
বসলুম ওর এক বেঞ্চিতে।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
‘কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার!
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;
দূরে যাবে তুমি,
তাই, যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো?’
আমি বললাম,বলব।
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
‘আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে-
কিছুই কি নেই বাকি?’
একটুকু রইলেম চুপ করে;
তার পর বললেম,
‘রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।’
খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম নাকি।
ও বললে, ‘থাক এখন যাও ও দিকে।’
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে।
আমি চললেম একা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা এক অনন্ত অনুভূতির পৃথিবী তৈরি করে, যেখানে প্রেমের কোনো সীমা বা সংজ্ঞা নেই, বরং এটি এক শাশ্বত সম্পর্কের প্রতীক। তাঁর কবিতায় প্রেমের মাধুর্য, দুঃখ, আনন্দ এবং শুদ্ধতা একে অপরের মধ্যে মিশে যায়, যা পাঠককে চিরকাল স্মরণীয় এক অভিজ্ঞতায় ডুবিয়ে দেয়।