বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলাম

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন  ২৪ মে, ১৮৯৯ সালে (বাংলা- ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে ।

তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতার নামা জাহেদা খাতুন। নজরুল ছিলেন তাদের ষষ্ঠ সন্তান।

কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল “দুখু মিয়া”। তিনি মাত্র ৮ বছর বয়সে পিতাকে যার কারনে চরম দারিদ্র্যে নিপতিত হন।

মৃত্যু:- ১০ অক্টোবর, ১৯৪২ সালে মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে দূরারোগ্য (পিক্স ডিজিজ) ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। তিনি ২৯ আগস্ট, ১৯৭৬ সালে (বাংলা- ১২ই ভাদ্র, ১৩৮৩) ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

নজরুলের দাম্পত্য জীবন

১৮ জুন, ১৯২১ সালে কুমিল্লার দৌলতপুরে সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিসের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু তাকে ঘরজামাই থাকতে হবে কবি এটি কোনোভাবেই মানতে না পেরে বাসর রাতেই দৌলতপুর ছেড়ে চলে যান। দীর্ঘ ১৬ বছর পর তিনি নার্গিসকে একটি চিঠি লেখেন।

পরবর্তীতে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে গিরিবালা দেবীর কন্যা আশালতার সাথে নজরুলের প্রণয় জন্মে এবং ২৪ এপ্রিল, ১৯২৪ সালে আশালতা সেনগুপ্তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর আশালতার নাম পরিবর্তন করে রাখেন প্রমীলা।

কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি বলা হয় কেন

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে আমৃত্যু সকল অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার ও প্রতিবাদী। এ জন্য তাঁকে বাংলা সাহিত্যের ‘বিদ্রোহী কবি’ বলা হয়।

কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদিত পত্রিকা

‘ধূমকেতু’- ১৯২২ (১৯২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করেন]‘লাঙ্গল’- ১৯২৫

‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের একটি বাণী ছাপা হত- ‘আয় চলে আয়রে ধূমকেতু….

নজরুলের প্রথম প্রকাশিত রচনা/গল্প-

কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত গল্প- ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ (১৯১৯)। এটি ‘সওগাত’ পত্রিকার মে-জুন সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ।

নজরুলের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ

নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ (১৯২২, সেপ্টেম্বর)। কবি এ কাব্যটি বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে উৎসর্গ করেন। এ কাব্যে মোট ১২টি কবিতা আছে।

‘অগ্নিবীণা” কাব্যের বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’,। কবিতাটি  ‘সাপ্তাহিক বিজলী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কবিতাটি অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা। ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যের প্রথম কবিতা ‘প্রলয়োল্লাস’।

নজরুলের প্রথম প্রকাশিত কবিতা

কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কবিতা-‘মুক্তি’ (১৯১৯)। এটি ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’র জুলাই-আগস্ট সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধ

নজরুলের প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধ-‘তুর্কমহিলার ঘোমটা খোলা’ (১৯১৯)। এটি ‘সওগাত পত্রিকার কার্তিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।

নজরুলের প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ

‘যুগবাণী’ (অক্টোবর, ১৯২২)

কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত নাটক

‘ঝিলিমিলি’ (১৯৩০)।

নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ/ গল্পগ্রন্থ

‘ব্যথার দান’ (১৯২২)

নজরুলের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস

 ‘বাঁধনহারা’ (১৯২৭)

কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ

বাক্যগ্রন্থের নামপ্রকাশিত
দোলনচাঁপা১৯২৩
বিষের বাঁশি১৯২৪
ভাঙার গান১৯২৪
ছায়ানট১৯২৪
চিত্তনামা১৯২৫
সাম্যবদী১৯২৫
মরুভাস্কর১৯৫০
সিন্ধু হিন্দোল১৯২৭
সঞ্চিতা১৯২৮
জিঞ্জির১৯২৮
চক্রবাক১৯২৯
সন্ধ্যা১৯২৯
প্রলয়শিখা১৯৩০
নির্ঝর১৯৩৯
নতুন চাঁদ১৯৩৯
ঝিঙেফুল১৯২৬
শেষ সওগাত১৯৫৮

কাজী নজরুল ইসলামের উপন্যাস কয়টি

নজরুলের উপন্যাস-৩টি।

বাঁধনহারা১৯২৭ সালে।
মৃত্যুক্ষুধা১৯৩০ সালে।
কুহেলিকা১৯৩১ সালে।

কাজী নজরুল ইসলামের নাটক

পুতুলের বিয়ে
মধুমালা
ঝিলিমিলি
আলেয়া

নজরুলের কতটি গ্রন্থ নিষিদ্ধ হয়

কাজী নজরুল ইসলামের ৫টি গ্রন্থ নিষিদ্ধ হয়। যথা-

‘বিষের বাঁশি’নিষিদ্ধ- ১৯২৪, ২২ অক্টোবর,।
‘ভাঙার গাননিষিদ্ধ- ১৯২৪, ১১ নভেম্বর।
‘চন্দ্ৰবিন্দু’নিষিদ্ধ- ১৯৩১, ১৪ অক্টোবর।
‘প্রলয়শিখা’নিষিদ্ধ- ১৯৩০, ১৭ সেপ্টেম্বর।
‘যুগবাণী’নিষিদ্ধ- ১৯২২, ২৩ নভেম্বর।

বি.দ্র:- ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যের ‘রক্তাম্বরধারিণী মা’ কবিতাটি নিষিদ্ধ হয়।

‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত হলে পত্রিকার এ সংখ্যা নিষিদ্ধ হয় এবং নজরুল ইসলামকে ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

কাজী নজরুল ইসলামের পদক সমূহ

একুশে পদক১৯৭৬ – বাংলাদেশ সরকা
জগত্তারিনী স্বর্ণপদক’-১৯৪৫ – কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পদ্মভূষণ১৯৬০ – ভারত সরকার
ডি.লিট’-১৯৬৯ – রবীন্দ্রভারতী
ডি.লিট’-১৯৭৪ – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)

কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত পঙক্তি

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। (নারী)
বউ কথা কও, বউ কথা কও, কও কথা অভিমানিনী, সেধে সেধে কেঁদে কেঁদে যাবে কত যামিনী। (নজরুলগীতি)
চাষী ওরা, নয়কো চাষা, নয়কো ছোট লোক ।
দেখিনু সেদিন রেলে, কুলি বলে এক বাবু সাব তারে ঠেলে দিল নীচে ফেলে। (কুলি-মজুর)
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে। (আমার কৈফিয়ৎ)
দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাপার। (কাণ্ডারী হুঁশিয়ার)
গাহি সাম্যের গান, ধরণীর হাতে দিল যারা আনি ফসলের ফরমান। (জীবন বন্দনা)
আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ। (বিদ্রোহী)
আমি চিরদুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!(বিদ্রোহী)
১০রমযানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ। (নজরুলগীতি)
১১প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষ্মী নারী। (নারী)
১২কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি,
তবুও থামে না যৌবন বেগ, জীবনের উল্লাসে। (জীবন-বন্দনা)
১৩মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্য।
(বিদ্রোহী)
১৪আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর। আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাত্রীর। (বিদ্রোহী)
১৫সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই। (নারী)
১৬হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান। তুমি মোরে দানিয়াছ, খ্রীস্টের সম্মান কণ্টক-মুকুট শোভা। (দারিদ্র্য)
১৭গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান। (মানুষ)
১৮কাণ্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা, দাঁড়ী মুখে সারিগান- লা শরীক আল্লাহ। (খেয়াপারের তরণী)
১৯ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান, আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান। (কাণ্ডারী হুশিয়ার)
২০কাঁটা-কুঞ্জে বসি তুই গাঁথিবি মালিকা, দিয়া গেনু ভালে তোর বেদনার টীকা। (দারিদ্র্য)

আরো পড়ুন:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। নজরুল কত সালে ও কোথা থেকে প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন?

উত্তর:- গ্রামের মক্তব থেকে ১৯০৯ সালে।

২। নজরুলকে কবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়?

উত্তর:- ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে।

৩। নজরুলকে কবে বাংলাদেশে আনা হয়?

উত্তর:- ২৪ মে, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ।

৪। বাংলাদেশের রণসংগীতের রচয়িতা কে?

উত্তর:- কাজী নজরুল ইসলাম।

৫। কোন কবিতা প্রকাশিত হলে নজরুল গ্রেফতার হন?

উত্তর:- ‘আনন্দময়ীর আগমনে’

৬। নজরুল কত সালে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হন?

উত্তর:- ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাজারের নিকটবর্তী কাজী সিমলা গ্রামের দরিরামপুর স্কুলে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি করান।

৭। তিনি কোন সময়ে লেটো গানের দলে থাকেন?

উত্তর:- ১৯০৯-১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে। তার চাচা কাজী বজলে করিম লেটো গানের দলের ওস্তাদ ছিলেন।

৮। লেটো কী?

উত্তর:- বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমান নাট্যদল।

৯। নজরুল কত সালে সেনাবাহিনিতে যোগ দেন?

উত্তর:- ১৯১৭ সালে  সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচি যান।

১০। নজরুল কবে মস্তিষ্কের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারান?

উত্তর:- ১০ অক্টোবর, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে।

আরো পড়ুন:- জসীম উদ্দীন

Share this

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *