আয়াতুল কুরসী পবিত্র কুরআনের সূরা আল-বাকারাহ (২:২৫৫)-এর একটি বিশেষ আয়াত, এটি আল-কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ আয়াত। যাকে “কুরআনের সিংহাসন আয়াত” হিসেবেও অভিহিত হয়।
কুরসি শব্দের অর্থ একবস্তুর সাথে অন্য বস্তুর মিলানো। এ জন্য চেয়ার বা আসনকে কুরসি বলা হয়। কেননা আসনে অনেক কাঠকে একত্র করা হয়। কুরসি শব্দের অন্য অর্থ হলো সম্রাজ্য, মহিমা, জ্ঞান ও সিংহাসন।
এ আয়া আল্লাহ তায়ালার পরিচয়, ক্ষমতা, মহিমা ও গৌরবের কথা অত্যন্ত স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ জন্য এ আয়াতকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়।
আয়াতুল কুরসি আরবি
আয়াতুল কুরসী কেবল একটি আয়াত নয়, এটি মুসলিম জীবনের প্রতিদিনের সুরক্ষা ও আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ আপনাকে সহায়তা করবে সঠিকভাবে তেলাওয়াত করতে। যেকোনো ভুল উচ্চারণ থেকে বিরত থাকতে আরবি শিখে নিতে পারেন বা একজন অভিজ্ঞ ক্বারির কাছ থেকে তেলাওয়াত শিখে নেওয়া উত্তম।
যারা আরবি পড়তে পারেন না, তারা বাংলা উচ্চারণের সাহায্যে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে নিচের বিষয় সমূহ লক্ষ্য রাখবেন-
- যারা একেবারে শুরুতে আছেন, তারা বাংলা উচ্চারণ ব্যবহার করে তেলাওয়াত শুরু করতে পারেন। তবে এটিকে স্থায়ী সমাধান হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।
- প্রতিটি শব্দ মনোযোগ দিয়ে ধীরে ধীরে উচ্চারণ করার চেষ্টা করুন।
- এটি পড়ার সময় অর্থ এবং আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে ভাবা উত্তম।
- শুদ্ধ উচ্চারণ শিখতে কুরআনের অডিও বা ভিডিও তেলাওয়াত শুনে অনুশীলন করুন।
আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ
আরো পড়ুন: আসসালামু আলাইকুম অর্থ
আয়াতুল কুরসি আরবি বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থ একসাথে
আরবি | বাংলা উচ্চারণ | বাংলা অর্থ |
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ | আল্লাহু লা—ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূম | তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতিত ইবাদতের উপযুক্ত আর কোনো ইলাহ নেই, তিনি সদা জীবিত এবং বিদ্যমান |
لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ | লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম | আল্লাহ তাআলা তন্দ্রা ও নিন্দ্রা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত |
لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ | লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব | আকাশ এবং জমিনের যা কিছু রয়েছে তার সবাই আল্লাহর মালিকানাধীন |
مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ | মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদা -হূ ইল্লা বিইযনিহ | সৃষ্টি কোনো বস্তুই আল্লাহর চেয়ে বড় নয় বিধায় এমন কে আছে যে তাঁর সামনে তাঁর অনুমতি ব্যতিত সুপারিশ করতে পারে? |
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ | ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খলফাহুম | দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন) |
وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ | ওয়ালা ইয়ুহীতূনা বিশাইইম মিন্ ইলমি -হী ইল্লা বিমা শা-আ | সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞান মিলে একত্রিত হয়ে আল্লাহর জ্ঞানের কোনো একটি অংশ বিশেষকেও পরিবেষ্টিত করতে পারে না। |
وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ | ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব | তাঁর কুরসি এত বড় যে, সাত আসমান ও সাত জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। |
وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا | য়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা | আল্লাহর নিকট এত বৃহৎ দুইটি সৃষ্টি আসমান-জমিনের হেফাজত করা কোনো কঠিন কাজ নয়। |
وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ | ওয়া হুয়াল ‘আলিয়্যূল ‘আযী-ম। | তিনি অতি উচ্চ এবং অতি মহান। |
আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ কে
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
আয়াতুল কুরসি অত্যন্ত বরকতময় আয়াত। রাসুলুল্লাহ (স,) এ আয়াতকে সবচেয়ে উত্তম আয়াত বলে অভিহিত করেছেন। মহানবি (স,) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পাঠ করে, তার জন্য বেহেশতের পথে একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো বাধা থাকে না ।‘ (নাসাই)
অর্থাৎ মৃত্যুর সাথে সাথেই সে বেহেশতের আরাম-আয়েশ উপভোগ করতে শুরু করবে। অন্য হাদিসে মহানবি (স,) বলেন, যে ব্যক্তি প্রভাতে ও শয়নকালে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সর্বপ্রকার বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবেন। (তিরমিযি)
অপর এক হাদিসে এসেছে, একদা, রাসুল (স,) উবাই ইবনে কাবকে জিজ্ঞাসা করলেন – কুরআনের কোন আয়াতটি সবচাইতে শ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ। উবাই রা. বললেন, তা হলো আয়াতুল কুরসি। উত্তর শুনে রাসুল (স,) তা সমর্থন করলেন এবং বললেন-হে আবুল মুনযির ( উবাই রা. এর ডাকনাম) এ উত্তম জ্ঞানের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।‘ (সিহিহ্ মুসলিম)
আয়াতুল কুরসিতে আল্লাহ তায়ালার গুণাবলি ও ক্ষমতা স্পষ্টরূপে ফটে উঠেছে। আয়াতের প্রথমেই বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র ইলাহ, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। সকল ইবাদত ও প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য নির্ধারিত। তিনি অনাদি অনন্ত। তিনি চিরকাল ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।
তাঁর জ্ঞান অসীম, সকল কিছুই তাঁর জ্ঞানের আওতাধীন, তিনি মহান সত্তা । আসমান জমিনের বিশালতা তাঁর কাছে কিছুই না। তিনি ক্লান্তি, নিদ্রা, তন্দ্রা, ইত্যাদির উর্ধ্বে। এককথায় তিনিই সর্বশক্তিমান, সকল শক্তির আধার, মহান, বর্সশ্রেষ্ঠ।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর বয়স কত