এই প্রবন্ধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে ঘুমের দোয়া, ঘুম থেকে ওঠার দোয়া, মাথা ব্যথার দোয়া, বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া, এবং আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়ার মতো দোয়াগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়। এছাড়াও, ইস্তিগফার, ইস্তেখারা, আকিকার দোয়া, ইসমে আজম দোয়া ও তার সংখ্যা, অজুর দোয়া, আজানের জবাব ও দোয়া, এবং সর্বাধিক মূল্যবান দোয়া সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
- ইসমে আজম দোয়া
- মাথা ব্যথার দোয়া
- ঘুমের দোয়া
- ইস্তেগফার দোয়া বাংলা উচ্চারণ
- ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম ও দোয়া
- অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া
- বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
- আকিকার দোয়া
- অভাব দূর করার দোয়া
- উপসংহার
ইসমে আজম দোয়া
ইসমে আজম” শব্দের অর্থ “আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নাম“। এটি এমন নাম বা দোয়া, যা দ্বারা মহান আল্লাহকে ডাকলে তিনি দোয়া কবুল করেন। হাদিসে বলা হয়েছে, কিছু নির্দিষ্ট নাম রয়েছে, যা দ্বারা আল্লাহকে ডাকলে তিনি অবশ্যই সাড়া দেন এবং যা দ্বারা কিছু চাওয়া হলে তিনি খালি হাতে ফিরান না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“আল্লাহর এমন একটি মহান নাম আছে, যা দ্বারা দোয়া করলে তিনি কবুল করেন এবং যা দ্বারা কিছু চাওয়া হলে তিনি তা প্রদান করেন।“
ইসমে আজম দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি একমাত্র সত্য ইলাহ, আপনার ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি এক ও অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং নিজেও কারও দ্বারা জন্মগ্রহণ করেননি, আর আপনার সমতুল্য কেউ নেই।
হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, একবার রাসুল (সা.) মসজিদে প্রবেশ করেছেন। এমতাবস্থায় এক লোক নামাজ শেষে এ দোয়া করছিলেন, তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, ‘তুমি জানো, তুমি কী দিয়ে দোয়া করেছ? তুমি দোয়া করেছ ‘ইসমে আজম’ দিয়ে, যার মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন।
ইসমে আজম দোয়া কয়টি
ইসমে আজম বলতে আল্লাহ তায়ালার সেই মহান নামকে বোঝানো হয়, যা দ্বারা তাঁকে ডাকলে তিনি দ্রুত দোয়া কবুল করেন। বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্ন ইসমে আজম দোয়া উল্লেখ আছে, তাই নির্দিষ্টভাবে ইসমে আজম কয়টি তা বলা সম্ভব নয়। তবে কিছু বিশেষ দোয়া রয়েছে, যেগুলোকে ইসমে আজম বলা হয়েছে। নিচে ইসমে আজম দোয়াগুলো আরবি বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ দেওয়া হলো-
ইসমে আজম দোয়া-২

ইসমে আজম দোয়া-৩

- তাহাজ্জুদ, বিপদ-মুসিবত, রোগমুক্তি ও প্রয়োজন পূরণের জন্য এই দোয়াগুলো পড়া খুবই ফজিলতপূর্ণ।
- আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নাম বা দোয়া দিয়ে দোয়া করলে তা দ্রুত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- ইসমে আজম নির্দিষ্ট একটি দোয়া নয়, বরং একাধিক দোয়া রয়েছে, যা হাদিসে পাওয়া যায়।
- আল্লাহ, হাইয়্যু, কাইয়্যুম, যুল-জালালি ওয়াল-ইকরাম” ইত্যাদি নামগুলো ইসমে আজম হিসেবে বিবেচিত হয়।
আল্লাহ আমাদের সকল দোয়া কবুল করুন এবং ইসমে আজমের মাধ্যমে আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনুন। আমিন। এই দোয়াগুলো ছাড়াও, আপনি আপনার নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন।
আরো পড়ুন: তাশাহুদ দুরুদ শরীফ দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ সহ
মাথা ব্যথার দোয়া
মাথা ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা যা প্রায় আমাদের জীবনে ঘটে থাকে। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন স্ট্রেস, টেনশন, বা ঘুমের কারনেও হয়ে থাকে।
মাথা ব্যথা দূর করার জন্য হাদিসে নির্দিষ্ট কিছু দোয়া উল্লেখ আছে। নিচে আরবি, বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ কয়েকটি দোয়া দেওয়া হলো— মাথা ব্যথা কমাতে খুবই উপকারী একটি দোয়া-

হযরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আমার মাথা ব্যথার কথা বললাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার ডান হাত তোমার ব্যথার স্থানে রাখ এবং সাতবার এই দোয়াটি পড়ো।
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাযী লা ইয়াদুররু মা’আ ইসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামাই ওয়াহুয়াস সামীউল আলীম।
বাংলা অর্থ: আল্লাহর নামে, যাঁর নামের সাথে পৃথিবীতে বা আকাশে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
আরো পড়ুন: আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
ঘুমের দোয়া
ঘুমানোর আগে পড়ার জন্য হাদিসে অনেক দোয়া উল্লেখ আছে। নিচে একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া আরবি, বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ দেওয়া হলো—
ঘুমানোর আগের দোয়া
ঘুমানোর আগে সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস পড়া সুন্নত এবং এটি আমাদের শয়তান ও সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে।
হাদিসে এসেছে: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে ঘুমানোর আগে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার করে পড়ে নিজের হাতের ওপর ফুঁ দিতেন এবং পুরো শরীরে হাত বুলাতেন।
ঘুমানোর আগে দোয়া আরবি
بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিকা রাব্বি ওয়ালা’তু জামবি ওয়া বিকা আরফাউহু, ইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা, ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাযহা বিমা তাহফাযু বিহি ইবাদাকাস সালিহীন।
বাংলা অর্থ: হে আমার রব! তোমার নামেই আমি আমার শরীর রাখলাম এবং তোমার নামেই আমি তা উঠাব। যদি তুমি আমার আত্মা রেখে দাও, তবে এর প্রতি দয়া করো, আর যদি তা ফিরিয়ে দাও, তবে এর হেফাজত করো যেভাবে তুমি তোমার নেক বান্দাদের হেফাজত করো।
ঘুম থেকে ওঠার দোয়া
ঘুম থেকে ওঠার দোয়া নিচে আরবি বাংলা এবং অর্থসহ আলোচনা করা হয়েছে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
বাংলা উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।
বাংলা অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পর জীবিত করলেন এবং তাঁর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন।
রাতে যত তাড়াতাড়ি পারেন ঘুমাবেন এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠবেন। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ঘুমানোর আগে হালকা ব্যায়াম বা কোরআন তেলওয়াত করতে পারেন। ঘুমানোর আগে রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
আরো পড়ুন: নবীর স্ত্রীদের নাম
ইস্তেগফার দোয়া বাংলা উচ্চারণ
ইস্তিগফার” শব্দটি أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ থেকে এসেছে, যার অর্থ “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চাই”। এটি পাপমুক্তি ও আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। ক্ষমা প্রার্থনায় তাওবাহ বা ইসতেগফারের বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনায় অনেক দোয়া ও ইসতেগফার রয়েছে। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে-
আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া
ইস্তিগফার পাঠ করার বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, শুধু “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলা। “আস্তাগফিরুল্লাহ” একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি”। এটি একটি সংক্ষিপ্ত দোয়া কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া– টি পাঠ করে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের ভুল ত্রুটি ও গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি।
আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া আরবি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া আরবি | أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ |
আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া বাংলা | আস্তাগফিরুল্লাহ |
আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া অর্থ | আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। |
ইস্তিগফার কতবার পড়তে হয়
- প্রতিদিন ৭০-১০০ বার ইস্তিগফার পড়া সুন্নত।
- নামাজের পর, তাহাজ্জুদে, সকালে ও রাতে বেশি বেশি পড়া উত্তম।
- বিপদ-মুসিবতে পড়লে আল্লাহ সাহায্য করেন।
- কোনো গুনাহ করে ফেললে সাথে সাথে পড়া উচিত।
ইস্তিগফার পড়ার ফজিলত
- গুনাহ মাফ হয়
- আল্লাহর রহমত লাভ হয়
- বিপদ-মুসিবত দূর হয়
- রিজিক ও বরকত বৃদ্ধি পায়
- জান্নাত লাভের সুসংবাদ রয়েছে
ইস্তেগফার দোয়া-২
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
বাংলা উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে’
বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক এবং আমি তাঁর দিকেই ফিরে যাচ্ছি (বা তওবা করছি।
ইস্তেগফার দোয়া-৩
لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যোয়া-লিমীন’
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি মহা পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত।
ইস্তেগফার দোয়া-৪
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
বাংলা উচ্চারণ: রব্বিগফিরলী ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাউওয়া-বুর রহীম’
বাংলা অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর ও আমার তওবা কবুল কর।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার
মানুষ হিসেবে আমরা ভুল করি। সাইয়েদুল ইস্তেগফার পাঠ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি আমাদের গুনাহ মাফ করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ে এবং সন্ধ্যায় মারা যায়, সে জান্নাতে যাবে।
ইস্তেগফার দোয়া বাংলা উচ্চারণ

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তোমাকে ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি-ই আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তোমার প্রতি করা অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতিতে অবিচল থাকার চেষ্টা করছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার প্রতি তোমার অনুগ্রহ স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করো, কারণ একমাত্র তুমিই পাপসমূহ ক্ষমা করবার মালিক।’
সাইয়েদুল ইস্তেগফার কতবার পড়তে হয়
- প্রতিদিন সকালে (ফজরের পর) ও সন্ধ্যায় (মাগরিবের পর) ১ বার করে পড়া সুন্নত।
- গুনাহ করলে সাথে সাথে পড়া উচিত।
- বেশি বেশি পড়লে জান্নাতের আশা করা যায়।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার এর ফজিলত
- জান্নাত লাভের সুসংবাদ
- রিজিক ও বরকত বৃদ্ধি পায়
- বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি মেলে
- গুনাহ মাফ হয়
- হৃদয় প্রশান্ত হয় ও দুশ্চিন্তা দূর হয়
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত
ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম ও দোয়া
ইস্তেখারা নামাজ রাসুলুল্লাহ (সা.) শেখানো একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যখন কেউ কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় থাকে, তখন আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার জন্য ইস্তেখারা নামাজ ও দোয়া পড়েন।
হাদিসে এসেছে:
“তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজে সংকীর্ণতায় পড়ে, সে যেন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে, তারপর এই দোয়া পড়ে।”
(সহিহ বুখারী: ১১৬৬)
ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম
- ওজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন।
- প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা আল-কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা আল-ইখলাস পড়া উত্তম।
- নামাজ শেষ করে নিচের ইস্তেখারার দোয়া পড়ুন।দোয়ার মাঝে নিজের প্রয়োজনীয় কাজের কথা মনে মনে বলুন।
ইস্তেখারার দোয়া বাংলা উচ্চারণ
ইস্তেখারা শব্দের অর্থ “কল্যাণ প্রার্থনা করা”। যখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে (যেমন বিয়ে, চাকরি, ব্যবসা বা অন্যকিছু), অসুবিধা হয়, তখন এই দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে সঠিক পথ দেখানোর জন্য প্রার্থনা করা হয়।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার অসীম জ্ঞানের মাধ্যমে কল্যাণ প্রার্থনা করছি, তোমার অপরিসীম ক্ষমতার মাধ্যমে শক্তি কামনা করছি এবং তোমার বিশাল অনুগ্রহ থেকে সাহায্য চাইছি। নিশ্চয়ই, তুমি সবকিছু করতে সক্ষম, আর আমি অক্ষম। তুমি সব জানো, আর আমি জানি না। আর তুমিই অদৃশ্যের পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখো।
হে আল্লাহ! যদি এই (___) কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে তুমি তা আমার জন্য নির্ধারণ করো, সহজ করো এবং এতে বরকত দান করো। কিন্তু যদি এটি আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে তুমি তা আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দাও এবং আমাকে এর থেকে দূরে রাখো। তারপর যেখানেই কল্যাণ থাকুক না কেন, তুমি তা আমার জন্য নির্ধারণ করো এবং আমাকে তাতে সন্তুষ্ট করো।
ইস্তেখারা দোয়া হলো আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের উচিত ইস্তেখারা করে আল্লাহর দিকনির্দেশনা গ্রহণ করা।
আরো পড়ুন: ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া
ইসলামে অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া এবং তার জন্য দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। যখন কেউ অসুস্থ হয়, তখন তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং তার জন্য দোয়া করা আমাদের দায়িত্ব। নিচে কয়েকটি দোয়া উল্লেখ করা হলো, যা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য পড়া যেতে পারে:
রোগ মুক্তির জন্য দোয়া
রোগ মুক্তির জন্য বিশ্বাস ও ধৈর্যের সাথে দোয়া পড়ুন। নিচের দেওয়া দোয়াগুলো তিনবার বা সাতবার পড়ুন আশাকির আল্লাহ তায়ালা আপনারে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন।
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বান-নাসি আজহিবিল-বাসা, ইশফিহি ওয়া আনতাশ-শাফি, লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাআন লা ইয়ুগাদিরু সাকামা।
হে আল্লাহ! হে মানুষের রব! কষ্ট দূর করুন এবং রোগীকে সুস্থতা দান করুন। আপনিই তো আরোগ্য দানকারী, আপনার আরোগ্য ছাড়া আর কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দিন, যা কোনো রোগ অবশিষ্ট রাখবে না।
রোগ মুক্তির কামনার জন্য নিচের দোয়াটিও পড়তে পারন-
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বান-নাসি আজহিবিল-বাসা, ইশফিহি ওয়া আনতাশ-শাফি, লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাআন লা ইয়ুগাদিরু সাকামা।
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! হে মানুষের রব! কষ্ট দূর করে দিন এবং রোগীকে সুস্থতা দান করুন। আপনিই তো আরোগ্য দানকারী। আপনার আরোগ্য ছাড়া আর কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দিন, যা কোনো রোগ অবশিষ্ট রাখবে না।
আরো পড়ুন: ধাঁধা উত্তর সহ ৫০০০+
বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
মানুষ জীবনের নানা ধরনের বিপদ ও সংকটের সম্মুখীন হতে পারে। এমন অবস্থায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা এবং তাঁর কাছে দোয়া করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু দোয়া উল্লেখ করা হলো, যা বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা থেকে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও আলস্য থেকে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভয় ও কৃপণতা থেকে, এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের ভার ও মানুষের প্রভাব থেকে।
বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া-২
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
বাংলা উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহুল আজীমুল হালীম। লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু রব্বুল আরশিল আজীম। লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু রব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রব্বুল আরদ্বি ওয়া রব্বুল আরশিল কারিম।
বাংলা অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহাশক্তিশালী ও পরম ধৈর্যশীল। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের অধিপতি। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক এবং সম্মানিত আরশের মালিক।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে
আকিকার দোয়া
আকিকা কি
আকিকা হলো সন্তানের জন্মের পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। এটি সুন্নতে মুআক্কাদা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“প্রত্যেক শিশু তার আকিকার কারণে বন্ধক থাকে। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু জবাই করা হবে, তার মাথা মুণ্ডানো হবে এবং নাম রাখা হবে।”
(সুনানে আবু দাউদ: ২৮৩৮, তিরমিজি: ১৫২২)
আকিকার নিয়ম
ছেলে সন্তানের জন্য | ২টি ছাগল বা ভেড়া অথবা একটি গরুর ২ ভাগ |
মেয়ে সন্তানের জন্য | ১টি ছাগল বা ভেড়া অথবা একটি গরুর ১ ভাগ |
- সপ্তম দিনে করা উত্তম, তবে পরে করলেও বৈধ।
- জবাই করার সময় বিশেষ দোয়া পড়তে হয়।
আকিকার দোয়া বাংলা উচ্চারণ

আকিকার দোয়া বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! এটি আমার সন্তান (সন্তানের নাম)-এর আকিকা। এর রক্ত তার রক্তের পরিবর্তে, এর মাংস তার মাংসের পরিবর্তে, এবং এর অস্থি তার অস্থির পরিবর্তে উৎসর্গ করছি। হে আল্লাহ! এটিকে আমার সন্তানের জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মাধ্যম বানিয়ে দিন।
আকিকার গুরুত্ব ও ফজিলত
সন্তানের কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য সুন্নত।
পরিবার ও আত্মীয়দের মধ্যে আনন্দ ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়।
দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
সন্তানের ওপর থেকে কষ্ট দূর করার একটি মাধ্যম।
আকিকার মাংস বন্টনের নিয়ম
নিজে খাওয়া, আত্মীয়স্বজন ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা সুন্নত।
কোরবানির মতো ৩ ভাগে ভাগ করাই উত্তম – আত্মীয়, গরিব ও নিজের পরিবারের জন্য।
আকিকা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং সন্তানের জন্য দোয়া ও কল্যাণ কামনার অন্যতম মাধ্যম।
আল্লাহ আমাদের সন্তানদের জন্য কল্যাণ দান করুন এবং তাদের দ্বীন ও দুনিয়ায় সফলতা দান করুন। আমিন।
আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ কে
অভাব দূর করার দোয়া
মানুষ জীবনের বিভিন্ন সময়ে অভাব ও কষ্টের সম্মুখীন হয়। এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা এবং তাঁর কাছে দোয়া করা একজন মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু দোয়া ও আমল উল্লেখ করা হলো, যা অভাব ও সংকট দূর করতে সহায়ক হতে পারে:
رَبَّنَاۤ اَنۡزِلۡ عَلَیۡنَا مَآئِدَۃً مِّنَ السَّمَآءِ تَكُوۡنُ لَنَا عِیۡدًا لِّاَوَّلِنَا وَ اٰخِرِنَا وَ اٰیَۃً مِّنۡكَ ۚ وَ ارۡزُقۡنَا وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ
উচ্চারণ: রাব্বানা আনজিল আলাইনা মায়িদাতাম মিনাস সামায়ি তাকুনু লানা ঈদাল লিআওয়ালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আয়াতাম মিনকা; ওয়ারজুকনা ওয়া আনতা খাইরুর রাজিকিন।
অর্থ: “হে আমাদের রব! আমাদের জন্য আকাশ থেকে এক খাবারভর্তি খাঞ্চা প্রেরণ করুন, যা আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সকলের জন্য একটি আনন্দের উপলক্ষ হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হিসেবে থাকবে। আর আমাদের রিজিক দিন, কেননা আপনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।
অভাদ দূর করার জন্য হাদিসে থেকে একটি দোয়া উল্লেখ করা হলো-
اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْفَقْرِ، وَالْقِلَّةِ، وَالذِّلَّةِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أَظْلِمَ أو أُظْلَمَ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল ফাকরি, ওয়াল কিল্লাতি, ওয়াজজিল্লাতি, ওয়া আউযুবিকা মিন আন আজলিমা আও উজলিমা।
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দারিদ্র্য থেকে, স্বল্পতা থেকে, অপমান থেকে, আর আশ্রয় চাই কাউকে জুলুম করা থেকে বা কারো দ্বারা জুলুমিত হওয়া থেকে।
অভাব দূর করার জন্য দোয়া ও আমলের পাশাপাশি, আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা, ধৈর্য ধারণ করা এবং হালাল উপায়ে রিজিক অন্বেষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন: আসসালামু আলাইকুম অর্থ
উপসংহার
দোয়া হলো মুমিনের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য ও রহমত পাওয়ার মাধ্যম। এই প্রবন্ধে আমরা ঘুমের দোয়া থেকে শুরু করে ইস্তেখারা, ইস্তিগফার, বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া, আকিকার দোয়া, ইসমে আজম দোয়া, আজানের জবাব ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দোয়া সম্পর্কে জেনেছি।
প্রতিটি দোয়ার রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও কল্যাণ, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সুন্দর ও বরকতময় করতে পারে। আমাদের উচিত এসব দোয়া নিয়মিত পড়া, আমল করা এবং অন্তর থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। কেননা, দোয়া শুধু ইবাদতই নয়, বরং এটি আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দিন এবং আমাদের দোয়া কবুল করুন। আমিন।